সিডনির দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের তহবিল সংগ্রহ !

সিডনির দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের তহবিল সংগ্রহ !

 

গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিডনির রকডেলের রেডরোস ফাঙ্কশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল প্রস্তাবিত সিডনির দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য তহবিল সংগ্রহের নৈশভোজ। এই সন্ধ্যাটি সিডনিতে বসবাসরত বাঙালিদের জন্য একটি ইতিহাসে হয়ে থাকবে বিশেষ কয়েকটি কারণে। প্রথমতঃ অস্ট্রেলিয়াতে সকল বাঙালি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কোনো গঠনমূলক কাজে একত্রিত হয়েছে বাংলাদেশের ভাষাদিবস পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে নিয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের তহবিল সংগ্রহের জন্য। যেখানে সিডনির প্রায় প্রতিটি সংগঠনের উপস্থিতি যেমন পরিলক্ষিত হয় ঠিক তেমনিই বাংলাদেশ কিংবা অস্ট্রেলিয়া দুইটি দেশের ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী বাঙালিরা। আর এই অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করতে যে ব্যাক্তিগুলো নিরলসভাবে কাজ করে গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম কাউন্সিলর নাজমুল হুদা,কাউন্সিলর শাহে জামান টিটো, বাংলা হাবের সভাপতি মুনীর হোসেইন, যুবলীগের সভাপতি আদুল্লাহ আল নোমান শামীম এবং সামাজিক সংগঠক লিঙ্কন শফিকুল্লাহ।

আয়োজকদের মধ্যে নোমান শামীম জানিয়েছেন , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ৬০০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার যার সিংহভাগ খরচ এই নৈশভোজ থেকে (৩৫০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের কিছু বেশী) সংগৃহিত হয়েছে এবং এই তহবিল সংগ্রহের জন্য ৩৫০ জনের রাতের খাবারের যাবতীয় খরচ বহন করেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও তিনি জানান যে, বাকি অর্থের যোগান দেবার জন্য কয়েকজন ব্যাবসায়ী ইতিমধ্যে আয়োজকদের কথা দিয়েছেন।

প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের হাই কমিশনার মান্যবর সুফিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্টারবুরী ব্যাঙ্কসটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলর খাল আশফর, শোফি কোটসি এমপি ,বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সিল জেনারেল কামরুজ্জামান, লায়ন রং গাট্টন প্রাক্তন গভর্নর (লায়ন ডিস্ট্র্রিক্ট) এবং ডাঃ আয়াজ চৌধুরী।

অতিথিদের স্বাগত জানান ডঃ তানভীর এবং ফান্ড রেইজং ডিনার উপস্থাপনা করেন স্মৃতিসৌধের মুল উদ্যোক্তা কাউন্সিলর নাজমুল হুদা, স্মৃতির মিনারের বিস্তারিত তুলে ধরেন উদ্যোক্তা মুনীর হোসেইন, প্রভাবশালী কাউন্সিলর ও উদ্যোক্তা শাহে জামান টিটো কাউন্সিলের কাজের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি ভাষনে বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার বলেন, ‘ভাষাযোদ্ধাদের এই অনবদ্য কাজে ও সিডনির সফল এই কাজে আবারো এটি প্রমান হলো, বাঙ্গালী ঐক্যবদ্ধ তাঁর দেশ, ঐতিহ্য ও অহঙ্কারের অবস্থান থেকে।‘

গত ২৮শে জুলাই সিডনির লাকেম্বায় প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সিডনির দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধের নকশা ও আনুমানিক খরচের বিষয়ে আয়োজকরা তুলে ধরেন। এই স্মৃতিসৌধের নকশা করেন পার্থ প্রতীম বালা। এই নকশায় একটি বেদি থেকে দুটি হাতের ওপর পৃথিবীকে তুলে ধরে রাখা—এমন একটি কাঠামো রয়েছে। পৃথিবীর নকশাটিতে বাংলা ভাষার অক্ষরসহ বিভিন্ন ভাষার অক্ষর রয়েছে। স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ও প্রস্থ হবে ২৮ ফুট করে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৬ সালে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।

অনুষ্ঠানের শেষপর্বে একটি ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সকলকে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে পরিসমাপ্তি টানা হয়।