নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করবে বিএনপি

ফজলুল বারী:আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দিয়ে বিএনপি আগামীতে দুটি সরকার গঠন করবে। ভোটের আগে তারা কায়েম করবে নিরপেক্ষ সরকার। নির্বাচনের পর গঠন করবে জাতীয় সরকার। শুধু এখনও তারা নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান নিরপেক্ষ ব্যক্তিটির নাম চূড়ান্ত করতে পারছেনা।

আওয়ামী লীগের দুষ্ট লোকেরা শহীদ জিয়ার দল বিএনপির ভালো একদম দেখতে পারেনা। তাই তারা এত সুন্দর প্ল্যানকেও বলছে গাছে ‘কাঁঠাল গোঁফে তেল’। জাতীয় সরকারের প্রধান খালেদা জিয়া না তারেক রহমান হবেন, কৌশলগত কারনে তা এখনও প্রকাশ্যে বলছেনা বিএনপি।

আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার পর মির্জা ফখরুলরা গঠন করবেন  জাতীয় সরকার। যেহেতু এ দুটি প্রস্তাবনার একটিতেও আওয়ামী লীগ সরকার রাজি না, তাই দুটিই বিএনপিকে কষ্ট করে ‘কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে’ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আগামী নির্বাচনের পর দেশে যে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে সে সম্পর্কে একটি ধারনাও বিএনপি দিয়েছে। তাহলো যারা এই আওয়ামী বাকশালী সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকবে তাদের নিয়েই তারা জাতীয় সরকার করবে।

সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের খালেকুজ্জামানও এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। কিন্তু তারা বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনে নেই। তাদের বিএনপি জাতীয় সরকারে জায়গা দেবে কিনা তা তারা স্পষ্ট করেনি।

গণসংহতি নামের ক্ষুদ্র একটি দলের নেতা জোনায়েদ সাকী বিএনপির আন্দোলনে আছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষুদ্র একটি খন্ডের নেতা সাইফুল হোসেনও আছেন। এদের কারোরই অবশ্য রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। বাংলাদেশের কোথাও সংসদ নির্বাচন অথবা ইউপি নির্বাচনে জয়ী হবার মতো সংগঠন নেই।

তবু বিএনপি যদি কথা রাখে তাহলে আগামীতে তাদের টেকনোক্রেট কোটাতেও মন্ত্রী হবার একটি সম্ভাবনা আছে। বলাবাহুল্য বিএনপির সেই জাতীয় সরকারে বাংলাদেশের জন্মবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী থাকবে। জামায়াত থাকলেও বিএনপি মন্ত্রিত্ব দিলে জোনায়েদ সাকীগং তাতে রাজি হতেও পারেন।

তখন তাদের মন্ত্রিত্ব কবুল করতে বক্তব্যের একটি লাইনও বলে দেয়া হচ্ছে। বলতে হবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ফাঁসি হয়ে গেছে। আরও যারা যুদ্ধাপরাধী আছেন তারা এখন হয় কারাগারে, নয়তো অশীতিপর বৃ্দ্ধ। এখন যারা জামায়াতের নেতৃত্বে তাদের বেশিরভাগের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে।

আবার এমন বক্তব্য বেশি বেশি দিলে জামায়াতের কপালও পুড়তে পারে। জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে আওয়ামী লীগ সরকার। এখন কৌশলগত কারনের কথা বলে তারা জামায়াত নিষিদ্ধ করছেনা। জোনায়েদ সাকীগং মন্ত্রিত্বের আশায় জামায়াতের পক্ষ নিলে জামায়াত নিষিদ্ধের একটা পথ হলেও হতে পারে। এতে করে ইতিহাসে লেখা হবে তাদের নাম।

বিএনপির জাতীয় সরকার হলে কপাল খুলতে পারে রেজা কিবরিয়ার। তার বাবা শাহ এসএম কিবরিয়া আওয়ামী লীগ করায় মনের কষ্টে এখনও রেজা কিবরিয়া ঠিকমতো ঘুমুতে পারেননা। রেজা কিবরিয়ার অনুপ্রেরনা এখন খালেদা জিয়া। তিনি ভাবতে পারেননা খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের এত কষ্ট কি করে করেছেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হবার স্বপ্ন রেজা কিবরিয়ার।

আ স ম আব্দুর রব ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে পতাকা তুলেছিলেন। স্বাধীনতার পর জাসদ গঠন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সিরাজুল আলম খান দাদা ভাইকে জাসদের তাত্ত্বিক গুরু বলা হয়। তাকে কাপালিক, রহস্য মানব এসব আওয়ামী লীগের লোকজন বেশি বলেন।

কিন্তু বাকশাল গঠনের পর জাসদ নেতাদের নামে হুলিয়া জারী হলেও সিরাজুল আলম খানের নামে কেনো কোন হুলিয়া ছিলোনা, এ প্রশ্নের তারা কোন উত্তর দেননা।  জিয়াউর রহমানের আমলে কর্নেল তাহের সহ জাসদ নেতারা গ্রেফতার হন। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। কিন্তু মুক্তি হয় আ স ম রবদের।

জেনারেল এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন একাত্তরের নেতা আ স ম আব্দুর রব। তিনি সামরিক স্বৈরাচারের গৃহপালিত নেতা হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সরকার গঠনে সমর্থন দিয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন আ স ম আব্দুর রব।

এরপর তাকে আর মন্ত্রী করা হয়নি। এরপর তিনি আর কোন নির্বাচনেও জিততে পারেননি। এই রাগে-ক্ষোভে আ স ম রব এখন কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধী। বিএনপির আস্থাভাজন। আগামীতে ক্ষমতার শেয়ার পেতে তিনি বিএনপি শিবিরে যোগ দিয়েছেন। জাসদের তার খন্ডে তার স্ত্রী দলের দ্বিতীয় প্রধান নেত্রী।

এখন অনেক বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে অনেক কসরত করেও ক্ষমতা থেকে বিদায় করা সম্ভব হচ্ছেনা, তাই জীবন সায়াহ্নে থাকা আ স ম আব্দুর রবেরও আবার মন্ত্রী হওয়া হচ্ছেনা। মাহমুদুর রহমান মান্নারও একই কষ্টে দিন যায় রাত যায়।

সাবেক ডাকসু ভিপি মান্না জাসদ-বাসদ-জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন। কিন্তু এখানে এসে দেখেন বড় দলের ছোট নেতা থাকার চাইতে ছোট দলের বড় নেতা হিসাবে তিনি ভালোই ছিলেন। ১/১১ এর সময় জেনারেলদের কথায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন মান্না। অতঃপর মান্না আবার নিজের নতুন দল গঠন করেন। তার এখনকার দলের নাম নাগরিক ঐক্য।

কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন নাগরিকরা এমন হতভাগা যে মাহমুদুর রহমান নেতার মতো একজন বাগ্মী, সুদর্শন নেতা দেখেও দলে দলে তার পিছনে সমবেত হননি। বড় দল করতে না পারা মাহমুদুর রহমান মান্নাও তাই মনের দূঃখে বিএনপির পিছনে সমবেত হয়েছেন।

আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, রেজা কিবরিয়া, জোনায়েদ সাকীগংকে জাতীয় সরকারের মন্ত্রী করতে বিএনপিকে আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। একদার সংগ্রামী সংঠক আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ এদের কারও এখন আন্দোলন করার মতো সংগঠন নেই।

তারা চান আন্দোলন করবে বিএনপি। তারা বিএনপির সমাবেশে এসে গরম বক্তৃতা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে এক ধাক্কায় ফেলে দেবেন। এরপর মনের সুখে তারা বিএনপির জাতীয় সরকারে মন্ত্রিত্বের শপথ নিতে বঙ্গভবনে যাবেন।

কিন্তু বিএনপি আন্দোলনও করতে পারেনা আর তারাও মন্ত্রী হতে না পেরে চরম হতাশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে কাবু না করে নিরপেক্ষ সরকার জাতীয় সরকার কিভাবে করবে বিএনপি? আওয়ামী লীগকে ফেলে দিতে না পারলে জাতীয় সরকার তারা কী করে