ফজলুল বারী:সিডনিতে এক জায়গায় গেলে মজা করে বলি, ভাই দেশে কবে যাচ্ছেন। আপনিতো ক্ষমতায় যাচ্ছেন। আসলে তার দেশে যাওয়ার সময় নেই। বিদেশে আমরা সবাই যার যার কাজ সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। শুক্রবার তার ওখানে গিয়ে দেখি অনলাইনে খবর দেখছেন। জিজ্ঞেস করলাম কোন চ্যানেল। বললেন, এনটিভি।
বিএনপি জোটের মহাসমাবেশ আর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ঢাকা ছিল উত্তেজনাময়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় মহাসমাবেশ হতো মানিক মিয়া এভিন্যুতে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু এভিন্যুতে আওয়ামী লীগের সভাসমাবেশ সংকুচিত করে। আওয়ামী লীগ যেমন বিএনপিকে নয়া পল্টনে তাদের অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাজনীতি নিয়ে এরশাদ আমল পর্যন্ত মানুষের যত আবেগ আবেদন ছিল এর অনেককিছু এখন নেই। মানুষের অর্থনৈতিক সংগ্রাম আর আয়রোজগারের সুযোগ আগ্রহ বেড়েছে।
টেলিভিশনে বিএনপির সমাবেশ দেখছিলাম। জেনারেল জিয়া বহুদলীয় গনতন্ত্র দিয়েছেন! খালেদা জিয়া দিয়েছেন সংসদীয় গনতন্ত্র। আর তারেক রহমান টেক ব্যাক বাংলাদেশ করে ফেলবেন! মোটকথা সবাই ফেরেস্তা ছিলেন! কি কি ভাবে দেশের রাজনীতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সমূহকে কলুষিত করেছেন, কোথাও এসবের কোন স্বীকারোক্তি নেই!
যতদিন বেঁচে ছিলেন রাতের বেলা কার্ফু দিয়ে দেশ চালিয়েছিলেন জিয়া। বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে জামায়াত সহ মোল্লা দলগুলোকে রাজনীতিতে ফেরত আনেন। বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করায় স্বাধীন দেশে তাদের সবার রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশের সব ধান্ধাবাজ ব্যক্তিদের জড়ো করে রাজনৈতিক দল করেন প্রথমে জাগোদল পরে বিএনপি। হ্যাঁ না ভোটের নামে বাংলাদেশের প্রথম ভোট ডাকাতির নির্বাচন স্রষ্টা এই জেনারেল জিয়া।
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জিতলেও সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরতে চাইছিলেন না। কারন তার রানী রানী ভাব। সংসদ নেত্রী হিসাবে সংসদ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা সে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সংসদীয় পদ্ধতিতে না ফিরলে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেননা বলে হুমকি দিয়ে খালেদা জিয়ার মত পাল্টাতে বাধ্য করেন। তিন জোটের রূপরেখায় উল্লেখ ছিল তিন দফায় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু খালেদা এসে বলেন নিরপেক্ষ মানে পাগল আর শিশু! ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সব দল বর্জন করলে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে আসেন রাজনীতিতে!
১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে একুশ বছর পর রেডিও টিভিতে আবার বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয়। জিয়া এরশাদ খালেদা জিয়া এতবড় মুক্তিযুদ্ধের এতবড় পক্ষের শক্তি ছিলেন যে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করে রেখেছিলেন! আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করেছিল। খালেদার মনে হলো যেন এতে তার বিচার হয়ে যাচ্ছে! শেখ হাসিনা ২০০১ সালে দেশে প্রথমবারের মতো তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু এরপর বিচারপতি লতিফুর রহমান এমন সব কান্ড করেন যে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখন আওয়ামী লীগেরও আস্থা হারিয়েছে।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে সবার আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে! কেন, এতে কি তাদের বিচার হয়ে যাচ্ছিল। যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রী করে তাদের গাড়িতে দেয়া হয় লাল সবুজ পতাকা! মামুন এক সময় বনানীর এক বাসায় বন্ধুকে নিয়ে থাকতেন। তিনি পান হাওয়া ভবনের কর্তৃত্ব। ফালু পান প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কর্তৃত্ব! টিভি চ্যানেল সহ অনেক কিছু! হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল শাসন চালু করা তারেকের একটি বক্তব্য অনলাইনে পাবেন! ‘প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়!’ এই শক্তি প্রয়োগে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তারেক! এরপর মা-ছেলে মিলে সাজার জজ মিয়া নাটক! ইয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে এরা তত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে ধংস করেছেন।
এরপর বিদেশি ফর্মূলায় জেনারেল মঈন-ফখরুদ্দীন ক্ষমতায় এসে দেখা গেল তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোন সীমা পরিসীমা নেই! এমনকি ডক্টর কামালও ফতোয়া দিয়ে বলেছেন তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যতদিন খুশি থাকতে পারে! এখন বিদেশিরা যে খেলছে তা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্যে নয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদী তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ডক্টর ইউনুস ১২ কোটি টাকা বকেয়া আয়কর শোধ করে কিন্তু সাফসুতরো হয়ে গেছেন! এদের কি পরিমান টাকা ভাবতে পারেন? ১২ কোটি টাকা শোধ করতে সময় লাগেনি!
শুক্রবার বিএনপি মহাসমাবেশসহ যে নেতারা বড় গলায় বক্তৃতা দিয়েছেন সেই মির্জা ফখরুল, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস ক্ষমতায় থাকতে বড় মাপের চোর ছিলেন। নজরুল ইসলাম খানের কারনে কুয়েতে শ্রমিকরা বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা চালান। বিদেশে পলাতক তারেকও লাদেনের মতো ভিডিও বক্তৃতায় ফেরেশতার মতো কথা বলেছেন! অতীতের অপরাধ নিয়ে এদের কোন অনুশোচনা নেই!
ছাত্রলীগ, যুবলীগের কারনে শুক্রবার আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনেক বড় হয়েছে। কিন্তু যে নেতারা বক্তৃতা করেছেন এদের কারো তোফায়েল, সৈয়দ আশরাফুলদের ব্যক্তিত্ব, মুন্সিয়ানা নেই। আওয়ামী লীগ দলটাকে বারবার ক্ষমতায় আনছেন ক্ষমতায় ধরে রাখছেন একা শেখ হাসিনা। তার মেধা যোগ্যতার আশেপাশে কেউই নেই সরকারি দল বিরোধীদলে। উপদেষ্টাদের নিয়ে তিনি বিশেষ একটি শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। দিন শেষ রাজনৈতিক চাল যা তিনি খেলেন সেটা নিয়েই সবাই নড়াচড়া করেন। বাংলাদেশে বিদেশী কূটনীতিকদের খবরদারির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পরবর্তী ভূমিকার দিকে এখন তাকিয়ে দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অনেক ক্ষতি করবে। এর সবকিছু মাড়িয়ে এগিয়ে যাবে নতুন এক স্বাবলম্বী বাংলাদেশ।