জনপ্রিয় শিল্পী শিমুল মুস্তাফা ঘুরে গেলেন সিডনি শহরে (ভিডিও)

জনপ্রিয় শিল্পী শিমুল মুস্তাফা ঘুরে গেলেন সিডনি শহরে (ভিডিও)

বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী শিমুল মুস্তাফা ঘুরে গেলেন সিডনি শহরে এক ঘরোয়া আবৃত্তি সন্ধ্যায় । বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা’র একক কবিতাসন্ধ্যাটি সৃষ্টি করেছিল সিডনির বার্ডিয়া’য় এক নান্দনিক পরিবেশ। সন্ধ্যাটি ছিল প্রবাসী কবিতা প্রেমীদের জন্য এক অনবদ্য পাওয়া। খরতপ্ত রোদে এক পশলা বৃষ্টির মতো যান্ত্রিক জীবনে কবিতা সন্ধ্যাটি এনেছিল একমুঠো রোমান্সের বারতা।

শিমুল মুস্তাফা গত ৩ এপ্রিল সোমবার দুপুরে সিডনিতে যখন পৌঁছান, তখন ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টি-শীত ও  সাপ্তাহিক কাজের দিনকে উপেক্ষা করে সিডনির  দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তার কিছু গুনগ্রাহী ভক্তরা,  শুধু তার মুখে দুই একটা কবিতা শুনার জন্য। শিমুল মুস্তাফা এক এক করে বাংলা সাহিত্যের নামকরা কবিদের কবিতার  লাইনগুলো  আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন।  আমার পরিচয় – সৈয়দ শামসুল হক ,জেলখানার চিঠি – নাজিম হিকমত ,কেউ কথা রাখেনি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ,পাথর – ইয়াসিনুর রোমান ,আমি আজ কারো – নির্মলেন্দ গুন্ ,তুমার চোখ এত লাল – নির্মলেন্দ গুন্ ,রূচনা রবীন্দ্রনাথ-সুনেত্রা ঘটক ,বাতাসে লাশের গন্ধ – রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, দম্পতি গাঁথা -জয় গোস্বামী ,বাঁশি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বনলতাসেন -জীবনানন্দ দাশ,  প্রতিদান – জসীম উদ্দিন ,পাহাড় চূড়া – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , জন্মদিন – শুভ দাশগুপ্ত ,গল্পগুচ্ছ – শিমুল মুস্তাফা,  আমাদের মা – হুমায়ন আজাদ ।  এছাড়াও পছন্দ ও অনুরোধের প্রায়  সকল কবিতাই তিনি আবৃত্তি করে শোনান।শিমুল মুস্তাফা কবিতার  মাঝে বলেছেন মধ্যবিত্ত বাঙালীর কথা, সংগ্রামের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, বাংলার  মায়ের কথা , বাবার কথা। মন্ত্রের মত মুগ্ধ করে রেখেছিলেন উপস্থিত  শ্রোতাদের।

শিমুল মুস্তাফা সিডনি ছাড়াও  ক্যানবেরা,  এডিলাইড ও ব্রিসবেনে আবৃত্তি সন্ধ্যায় অংশগ্রহন করেন।  আজ মেলবোর্নে এক কবিতার  ওয়ার্কশপে অংশ নিবেন।  এর পরই ক্যানবেরা হয়ে আগামি ১০ই এপ্রিল তিনি তার প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে যাবেন।

আবৃত্তি শিল্পী  হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে কেন উনার  নামটি  প্রথম দিকেই, তা বুঝতে কারো বেশী সময় লাগেনি।  এ যাবত  সব মিলিয়ে  তাঁর ৪১টি এ্যালবাম বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

এই প্রথিতযশা শিল্পী অসংখ্য একক অনুষ্ঠান করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন ।এই শিল্পীর ঝুড়িতে তাই কবিতার সংখ্যা যে অগণনতা  তা বলা যায় সহজেই। কিছু কিছু কবিতার আবৃত্তি এতাটাই জনপ্রিয় যে মূল কবির বদলে সেটি শিমুল মুস্তাফার কবিতা হয়ে উঠেছে।

তিনি শুধু একজন শিল্পীই নন একজন সংগঠক, প্রশিক্ষক। ঢাকা শহরে জন্মেছেন, এই শহরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে জীবিকানির্বাহের তাগিদে নিজেকে যুক্ত করেছেন ব্যবসার সাথে। স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে আবার তিনি একজন পারিবারিক মানুষও।

আবৃত্তি তার পেশা নয়, নেশা। আশির দশকের গোড়ার দিক থেকেই জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে। কন্ঠে আওয়াজ তোলেন। তার ভয়হীন কন্ঠ আজও ভয়হীন। একজন দূরন্ত, দুর্নিবার এবং চির আপোষহীন মানুষ শিমুল মুস্তাফা ।

শিমুল মুস্তাফা প্রতি বছর বিজয়ের মাসে  ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে একাত্তর স্মরণে ৭১টি কবিতা আবৃত্তি করেন  এবং তার এই কবিতার  পাঠ শেষে  ১৯৭১টি মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। এই কবিতার আসরে বাংলাদেশের  হাজার হাজার  মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে অংশগ্রহন করে  থাকে।