যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের মধ্যে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক নেই, এ দাবি সেখানকার অভিবাসী বাংলাদেশিদের। এ ধরনের হামলায় দেশি কেউ হতাহত না হওয়ায় স্বস্তি থাকলেও ‘অন্য শঙ্কা থাকছেই’ বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের মধ্যে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক নেই। প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনও বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহত হওয়া সংক্রান্ত কোনও তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি।
তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সমস্যা হলেও, মুসলিমদের টার্গেট করে বসে পশ্চিমা শক্তিগুলো। ফলে আমরা কোনও কথা বলতে স্বস্তি বোধ করি না। আবার কেউ বলছেন, ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (রক্ষণশীল চরমপন্থী গ্রুপ) জাতীয় গ্রুপগুলো কোনও বাংলাদেশিকে একা পেলে হেনস্থা করার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না! তবে আশার জায়গা হলো, এমনিতে সাধারণ জনগণ এসব ব্যাপারে অনেক টলারেন্ট। আবার কেউ কেউ ‘আমাদের কোনও কথা বলা ঠিক হবে না’ বলে চুপ থেকেছেন।
ম্যানচেস্টারের অ্যারেনায় সোমবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে মার্কিন সংগীত শিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৯ জন। কনসার্টে প্রায় ২১ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিন ম্যানচেস্টারে রয়েছেন আইনজীবী এম নাঈম খান। তিনি বলেন,‘এখানকার বাংলাদেশিরা সকালের দিক থেকে খবর জানা শুরু করেছে! কারণ গতকাল যখন ঘটনাটি ঘটে সবাই মোটামুটি ঘুমে চলে গিয়েছিল! যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, পুরো এলাকাটি কর্ডন করে রাখা হয়েছে! আর যেহেতু ওই এলাকার সঙ্গে মূল রেললাইনের সংযোগ ছিল, তাই সব ট্রেনের শিডিউল ক্যান্সেল হয়েছে! জাতীয়ভাবে ইলেকশন ক্যাম্পেইন বন্ধ রেখেছে সবগুলো দল।’
এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণ অভিবাসী বাংলাদেশিরা একটু ভয় পায় কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছুটাতো শঙ্কা থাকবেই। তবে এর আগেও এমন আক্রমণ আমরা দেখেছি, যা এর চেয়েও ভয়াবহ ছিল (৭ জুলাই, ২০০৫)!সে সময়ের সঙ্গে এখনকার পার্থক্য হচ্ছে- সাধারণ ব্রিটিশদের মধ্যে সহনশীলতার অভাব। যার প্রমাণ আমরা দেখেছি ব্রেক্সিটের গণভোটে। সে অর্থে কিছুটা আশঙ্কা কাজ করবে। তবে ম্যানচেস্টারে যেহেতু অভিবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি, তাই কমিউনিটি থেকে সেভাবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
নাঈম খান আরও বলেন, ‘এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও হেট ক্রাইম বা রেসিয়াল এগ্রাভেটেড ক্রাইম খুব শক্ত হাতে দমন করে! তবে ইংলিশ ডিফেন্স লীগ (রক্ষণশীল চরমপন্থী গ্রুপ) জাতীয় গ্রুপগুলো কোনও বাংলাদেশিকে একা পেলে হেনস্থা করার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না!’
এদিকে আরেক প্রবাসী কামাল চৌধুরী নিজে এবং তার পরিচিতরা সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি পরে কোনও এক সময় কথা বলবো। এখন ব্যস্ত আছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধিকারকর্মী বলেন, ‘এই মুহূর্তে এসব নিয়ে আলাপ না করি। একেকটা হামলা শঙ্কার জায়গা তৈরি করে দিয়ে যায় অভিবাসীদের জন্য। আগামী দিনে প্রতিবেশী আপনার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাবে, এটা কার ভালো লাগবে। (বাংলা ট্রিবিউন )