সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আলোচিত ভাস্কর্য সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজন শ্রমিক গ্রিক দেবীর এ ভাস্কর্য সরানোর কাজ করছেন।
২৫ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পরপর ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে রয়েছেন ভাস্কর মৃণাল হক, যিনি ভাস্কর্যটির নির্মাণ শিল্পী। তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে জানানো হয়েছে ভাস্কর্যটি সরানো হবে। এটি সুপ্রিম কোর্টের পেছনে অ্যানেক্স ভবনের সামনে স্থানান্তর করার কথা রয়েছে। ভাস্কর্যের যেন ক্ষতি না হয়, তাই তদারকির জন্য রয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে গ্রিক দেবীর এই ভাস্কর্য স্থাপন করলে একে ‘মূর্তি’ আখ্যায়িত করে অপসারণের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম। ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করে দলটি। পরে একই দাবিতে ইসলামি অন্য দলগুলোও বিক্ষোভ করে। সম্প্রতি হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, দেশের উচ্চ আদালতের প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে তারও মত রয়েছে।
এরপর ইসলামি দলগুলোর আন্দোলন আরও জোরালো হয়। ভাস্কর্য না সরালে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দেয়। সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও, হরতালের হুমকি দেওয়া হয়।
এমনকি আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
ইসলামি দলগুলোর এমন দাবির নিন্দা জানান দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
২৩ মে মঙ্গলবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘মূর্তি’ সামনে নিয়ে জাতীয় ঈদগায় মুসলমানরা নামাজ আদায় করতে প্রস্তুত নয়। রমজানের আগেই মূর্তি সরাতে হবে। অন্যথায় ১৭ রমজান বদরি চেতনায় ঈমানদার জনতা রাজপথে নেমে আসবে। এর আগে ২১ এপ্রিল তিনি ঘোষণা দেন, রমজান মাসের শুরুর আগেই ভাস্কর্য সরাতে হবে। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করা হবে।
২১ মে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ দাবি করে, দেশের ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতে’ সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নিতে হবে। দাবি না মানলে হরতালসহ লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির হুমকি দেয় সংগঠনটি।
২০ মে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আখতার হোসেন বুখারী বলেছেন, ‘রোজার আগেই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের গ্রিক মূর্তি অপসারণ করা না হলে মুসল্লিরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে জাতীয় ঈদগাহে যাবে না। যদি কেউ যায় তবে সে হবে চিহ্নিত মুরতাদ।’
রোজার আগেই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের গ্রিক মূর্তি অপসারণ এবং প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা ১৩টি দল এ মানববন্ধন আয়োজন করে।
সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকে অবস্থিত গ্রিক দেবী থেমিসের ‘মূর্তি’ অপসারণে ১৭ মে মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন করেন আইনজীবীদের একটি অংশ।
১০ মার্চ এক বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, ‘প্রয়োজনে আবারও শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। অতীতে শাপলা চত্বরের অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমরা হেফাজত আমিরের নির্দেশে চলে এসেছি, কিন্তু ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ যদি সরকার কঠোর হাতে দমন না করে এবং অবিলম্বে গ্রিক মূর্তি অপসারণ করা না হয় তাহলে আবারো শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হবে। এবার আর শাপলা চত্বর থেকে তৌহিদী জনতা ফিরে আসবে না, যতক্ষণ সরকারের পতন না হবে।’
১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণে ওলামাদের দাবির সঙ্গে তিনি একমত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে, এটা না কি গ্রিক মূর্তি… এখানে গ্রিক মূর্তি কেমন করে আসবে?’
তিনি বলেন, ‘গ্রিকদের পোশাক ছিল একরকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে।’
সেসময় ভাস্কর্য সরাতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে বৈঠেক করার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেসময় ওলামাদের তার প্রতি আস্থা রাখারও আহবান জানান তিনি।
রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই ভাস্কর্যটি সরানোর দাবির মধ্যেই ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরু হলো। (প্রিয়.কম )