বাংলা নববর্ষ শুরুর প্রাক্কালেই বৈশাখী উৎসব শুরু হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে। প্রতি বছরের মত এইবারও সিডনি বাঙালি কমিউনিটি উৎযাপন করে বৈশাখী উৎসব। প্রাক্তন ফেডারেল এম পি লরি ফার্গাসন এই উৎসবের প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন এবং আনুষ্ঠানিকতার উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন , “অস্ট্রেলিয়ার মাল্টি কালচারাল সমাজে শিশু কিশোরদের মাতৃভাষা শিক্ষা ও সাংষ্কৃতিক চর্চার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং দীর্যদিন ধরে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য সিডনি বাঙালি কমিউনিটির প্রশংসা করেন।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেল এম পি মাইক ফ্রীল্যান্ডার এবং এন স্ট্যানলি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশেষ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উৎসবের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া শিশুকিশোরদের দল কিশোরসংঘের সদস্যদের “এসো হে বৈশাখ ..” গান দিয়ে সাংষ্কৃতিক পর্ব শুরু হয়। ক্ষুদে এই শিল্পীদের বাংলা গান,কবিতা আবৃত্তি ও নাচের পরিবেশনা বৈশাখী উৎসবকে প্রাণবন্ত করে রাখে। এই দলে ছিল আনুভা আহমেদ,মুনতাহার সিদরাতুন হক,সাফিনা জামান,মাহিমা বিশ্বাস,সারিকা ,আদীবা,আমীনা,ঐহিক তারিক,পৃথিবী তাজওয়ার ,জাফরী আহমেদ,স্নেহা দাশ। এই পর্বে হারমোনিয়ামে ছিলেন নিলুফার ইয়াসমিন,তবলায় সাকিনা আক্তার, মন্দিরায় লোকমান হাকিম এবং গিটারে ঈশান তারিক।
সুদক্ষ নৃত্য শিল্পী অর্পিতা সোম চৌধুরী ও তার তৈরী কিশোরীদের একটি চৌকস নাচের দল সম্মিলিত ভাবে একটি চমৎকার নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তুলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এবং বৈশাখী উৎসবের একখন্ড বাংলাদেশ। এই দলে ছিল সাফায়ার খীসা, মেঘাশ্রী দত্ত ও সামারা জাহান হক। এই দলটির বৈচিত্রময় সাজসজ্জা এবং দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনা সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
এরপর নাচ পরিবেশন করেন সিডনির অন্যতম নৃত্য শিল্পী স্মিতা বড়ুয়। দিলরুবা খানের “আমি কি হেরিলাম কদম তলায় গো” গানের প্লেব্যাকে তাল মিলিয়ে সিডনির স্বনামধন্য নাচের শিল্পী পূরবী পারমিতা বোসের পরিবেশনা। চোখ ধাঁধানো নাচের পর্বটি ছিল মনমুগ্ধকর।
পরবর্তীতে মনমাতানো গানের পরিবেশনায় আসেন সিডনির সুপ্রতিষ্ঠিত গানের জুটি আতিক হেলাল ও আরেফিনা মিতা।
সিডনির প্রখ্যাত সংগীত ও নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল বর্ষ উৎযাপনের পূর্ণ আমেজ।
সাংস্কৃতিক পর্বের প্রধান আকর্ষণ ছিল সুদূর বাংলাদেশ থেকে আগত প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী দিলরুবা খান। তিনি একে একে জনপ্রিয় গান গুলো গেয়ে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শকদের মন ভরিয়ে রাখেন। এর মধ্যে রেল লাইন বহে সমান্তরাল, বাউলা কে বানাইলো রে, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, নির্জন যমুনার কূলে, ভ্রমর কইয়ো গিয়া, দুই মেরুতে বাস এই গানগুলো অন্যতম। শেষ গান “পাগল মন মন কেনো এত কথা বলে …” এই গান গাওয়ার শুরু করার সাথে সাথে উপস্থিত দর্শকশ্রোতারা আসন ছেড়ে দিলরুবার গানের সাথে তাল মিলিয়ে গান গান। উপস্থিত সকলকে নিয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে সাংস্কৃতিক পর্বের পরিসমাপ্তি টানেন।
সবশেষে দিলরুবা খান কিশোরসংঘের কয়েকজন প্রতিভাবান শিল্পীকে সিডনি বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করেন এবং উপস্থিত দর্শকদের সাথে ছবি তোলার জন্য আন্তরিকতার সাথে সময় দেন। এই গুণী শিল্পীর গান শোনার জন্য উপচেপড়া দর্শকশ্রোতাদের ভিড় ছিল ৭ ই এপ্রিল সন্ধ্যায় ইঙ্গেলবার্নের গ্রেগ পের্সিবল হলে। এই শিল্পীকে যন্ত্রে সহায়তা করেন জিয়াউল ইসলাম তমাল (তবলা ও অক্টোপ্যাড),তানভীর হাওলাদার (বেইজ গিটার ),সোহেল খান (গিটার), সাইফ সোহান (কীবোর্ড) সুখী (ঢোল)।
শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন নাদিম খান ও তায়েফ রহমান। আপ্যায়নে ছিলেন দাওয়াত রেস্টুরেন্ট। পপি কবীর মেকআপ আর্টিস্ট। পোশাক এবং সাজসজ্জায় সহায়তা করেন বিলকিস খানম পাঁপড়ি। প্রচারে সাকিনা আক্তার, মঞ্চ সজ্জায় শাহ জামাল বাদল, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অজয় দত্ত এবং অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন পূরবী পারমিতা বোস। সিডনি বাঙালী কমিউনিটি ইনকের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন সেলিমা বেগম।