সিডনীতে বিজয়ের ৪৫ বছর উদযাপন

সিডনীতে বিজয়ের ৪৫ বছর উদযাপন

গত ১৩ই ডিসেম্বর রোববার ২০১৫ অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী সংগঠন ‘সিডনি-বাঙালি কমিউনিটি’ বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বিকাল ৫টায় সিডনি শহরের ইঙ্গেলবার্ন কমিউনিটি হলে আয়োজন করেছে  ‘এসো মেতে উঠি বিজয়ের আনন্দে।’ এই বিজয় উৎসব মূলত ছিল শিশু কিশোরদের বাংলাদেশ নিয়ে নানা পরিবেশনায় সাজানো। বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, শিশুকিশোরদের এবং সিডনির প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিকাল ৫.৩০মিঃ প্রথমে পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত দিয়ে শুরু করে ঈশান তারিক। পরপরই মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুষ্ঠান শুরু করেন এবং সঞ্চালনায় থাকেন সেলিমা বেগম।

এরপর কিশলয় কচিকাঁচা তাদের বিজয় দিবস ভিত্তিক নানা পরিবেশনা উপস্থাপন করে। সমবেত সঙ্গীত, ছড়া, নাচ ও গানের সাথে কিশলয় পরিবেশিত অনুষ্ঠান এক কথায় ছিল অনবদ্য। কিশলয় কচিকাঁচা’র পর ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’-গানটির সাথে একটি একক নৃত্য পরিবেশন করে নুশাবা রহমান। এরপরই আকর্ষণ ছিল কাম্পেলটাউন  বাংলা স্কুলের  ছোট বন্ধুদের পরিবেশনা । এই স্কুলের  ছোট বন্ধুরা ছড়া , গান ও নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে।

এ পর্যায়ে কিশোরদের পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছে আজন্ম কালের আবহ বাংলাকে।তানিয়া ও তাসফিয়া সুরেলা কণ্ঠে একটি করে দেশের গান গায়।

নতুন প্রজন্মের অস্ট্রেলিয়ান বাঙ্গালীদের মধ্যে ঐহিক তারিক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ও সামস হোসেন শহীদ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি করে ছোট প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। কিশলয় কচিকাচার ছোট বন্ধুদের বাংলাদেশ থিম নিয়ে একটি অসাধারন নৃত্য পরিবেশন করে “চার চাক্কা .হই হই বল গুরিয়া গেল কই…”। এরপর প্রদর্শিত হয় হামিদ উদ্দিন এর সংকলিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র। ১৯৭১ এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভাই  মঞ্জু তালুকদার এই পর্বটি শুরু করার সময় কিছুটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

মাগরেব নামাযের বিরতির পরপরই শুরু হয় শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের।কবিতা আবৃতির পর্বে প্রথমে নাসরিন আহমেদ আবৃতি করেন। তারপরই আসেন সিডনির অতি পরিচিত আবৃতিকার সুরভী ছন্দা এবং সাইফুর রহমান অপু। উপস্থিত সবাই গভীর আগ্রহ সহকারে তাদের আবৃতি উপভোগ করেন।

গানের পর্বে শারমিন পাপিয়া, ফারিয়া এবং রুনু রফিক একটি করে দেশের গান গেয়ে দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন।

সিডনির নামকরা গানের দল ‘লাল-সবুজ’ এর পরিবেশিত গান ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না।‘,’ যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে’ এই গানগুলো সবার মনে দাগ কাটে।

বাংলা কমিউনিটির পরিচিত শিল্পী আরফিনা মিতা’র সুরেলা কণ্ঠে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে…’ এবং আতিক হেলালের ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর…’ গান দুটি সবার মনকে মাতিয়ে তুলে।

সবশেষে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত।

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও আনন্দের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের স্বাধীনতার ও স্বকীয়তার আত্মপ্রকাশের দিন। নতুন প্রজন্মের কাছে  এই বার্তা প্রকাশের দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে আয়োজকরা জানান, ‘আমাদের নুতন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথা, ইতিহাস এরং দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই মূলত এই আয়োজন।’ অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্বাবধানে ছিল সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি (sydneybengalies.com)

নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে ‘সিডনি-বাঙালি কমিউনিটি বহুদিন ধরে প্রবাসে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাদের বিস্তারিত কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে sydneybengalies.com  নতুন প্রজন্মের কাছে ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরবার প্রয়াসেই এই বিজয় উৎসব। লাল সবুজ পোশাকে প্রচুর দর্শক উপস্থিতি ছিল আশাতীত। বিশেষ করে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এ যেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়া। বলা বাহুল্য বক্তৃতা বিহীন এই অনুষ্ঠানটি ছিল এক কথায় অপূর্ব।(সিডনি প্রতিবেদক)