ফজলুল বারী: কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার এখনও কেন বেঁচে আছেন, এটা এখন অনেকের কাছে কী ক্রোধের বিষয়? এমন যদি কেউ ভেবে থাকেন তাও কিন্তু মানবিক বিবেচনাপ্রসূত নয়। যতটা জানা যাচ্ছে কানাডার হাসপাতালের আইসিইউতে তার এখন শুধু জীবনটাই টিকে আছে।
যদি বেঁচেও যান নিবিড় কতটা সুস্থ জীবনাপন তিনি করতে পারবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সুস্থ হলে পুলিশ-আইন-আদালতের মুখোমুখি তাকে হতেই হবে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার মোটর দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও চিকিৎসাধীন। ।
১৩ ফেব্রুয়ারির ওই ভয়াবহ দূর্ঘটনায় নিবিড়ের তিন বন্ধু আরিয়ান দীপ্ত, শাহরিয়ার খান মাহির ও এঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ প্রান হারিয়েছেন। দূর্ঘটনার পর বিয়োগান্তক ঘটনাটি বাংলাদেশের জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শিরোনাম হবার কারন নিবিড় কুমার বিশ্বজিতের ছেলে।
জনপ্রিয় এই শিল্পীর সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার কারনে ঘটনা মানুষকে নাড়া দেয়। কিন্তু ক্রমে ক্রমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু লোকজন যেন শিল্পীকে দিতে চাইছেন খলনায়কের অভিধা! নিবিড়ের লাইসেন্স সাসপেন্ড ছিল, কুমার বিশ্বজিৎ অন্যের নামে ছেলেকে গাড়ি কিনে দিয়েছেন, এমন মনগড়া গল্পও অনেকে লিখছেন বলছেন!
লাইসেন্স সাসপেন্ড অবস্থায় কানাডার মতো দেশে কারও পক্ষে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামা সম্ভব নয়। নিবিড়ের লাইসেন্স নিয়ে সমস্যা থাকলে পুলিশ প্রথম দিনই তথ্যটি প্রকাশ করতো। গাড়ি কেনার সঙ্গে লাইসেন্সের কোন সম্পর্ক নেই। আপনার টাকা থাকলে গাড়ি কিনে ড্রাইভারও নিয়োগ দিতে পারেন। কি শিশুতোষ মন্তব্য! কুমার বিশ্বজিৎ আরেকজনের নামে গাড়ি কিনে ছেলেকে দিয়েছেন! আমার নামে গাড়ি কেনা হলে গাড়িটির মালিক হবো আমি। সে গাড়ি কি কুমার বিশ্বজিৎ বা তার ছেলে আর দাবি করতে পারবেন?
নিবিড় যে পিতার একমাত্র সন্তান, গাড়ি কিনে দিতে তার কানাডায় থাকা লাগেনা। বাংলাদেশেও অনেকে দেন। বিদেশে গাড়ি কেনা তুলনামূলক সহজ। পুরনো গাড়ি ২-৩ হাজার ডলারে কেনা যায়। একটা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কতদিন আছে এর ওপর নির্ভর করে পুরনো গাড়ির দাম।
প্রতি বছর একটি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট, রাস্তায় চলার ইন্সুরেন্স, রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে হয়। গাড়ির ইন্সুরেন্স আর গাড়ি প্রতি রাস্তার ইন্সুরেন্স পৃথক। অস্ট্রেলিয়ায় এই রাস্তার ইন্সুরেন্সের নাম গ্রীন স্লিপ। দূর্ঘটনার পর্ চিকিৎসা-অঙ্গ-জীবনহানির ক্ষতিপূরন গ্রীন স্লিপের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
নিবিড়দের দূর্ঘটনার সঙ্গে স্পিডিং জড়িত ছিল কিনা কানাডার পুলিশ এখনও বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বলেনি। এর স্বাক্ষ্য দিতে পারতেন যে তিন সহযাত্রী, তারা মারা গেছেন। নিবিড় যদি পুলিশকে স্বাক্ষ্য দেবার মতো সুস্থ না হন, রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ সব তথ্যই বের করে ফেলবে।
দূর্ঘটনায় নিবিড়ের যে তিন বন্ধু আরিয়ান দীপ্ত, শাহরিয়ার খান মাহির ও এঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈ প্রান হারিয়েছেন, এর ক্ষতিপূরন সম্ভব নয় কোন কিছুতেই । তাদের মা-বাবা’র কান্না শেষ হবার নয়। নিবিড়ের মা-বাবাও খুশিতে নেই। সন্তানকে গাড়ি কিনে দেয়া কোন অপরাধ নয়।
বিদেশে যারা থাকেন তাদের প্রায় সবাইকে টু-ডে অর টুমরো গাড়ি চালাতেই হয়, গাড়ি কিনতে হয়। নিজের একটা গাড়ি থাকা, ড্রাইভ করা এসব ডাক্তার থেকে শুরু করে অনেক চাকরির পূর্বশর্ত।
দূর্ঘটনা ভুল অথবা নিয়তির অংশ। সখ করে কেউ দূর্ঘটনা ঘটায়না। ১৩ ফেব্রুয়ারির দূর্ঘটনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কানাডার পুলিশ-আইন আদালতকে নিতে দিন। সেটা তদবির করে পাল্টানো যাবেনা। এর পিছনে বয়সজনিত হিরোইজমও থাকতে পারে।
আরিয়ান দীপ্ত, শাহরিয়ার খান মাহির ও এঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈর মা-বাবা’র মতো নিবিড়ের মা-বাবাও শোকার্ত-বিপদগ্রস্ত। তাদেরও পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই তারা আরিয়ান দীপ্ত, শাহরিয়ার খান মাহির ও এঞ্জেলা শ্রেয়া বাড়ৈর মা-বাবা’র পাশে দাঁড়াতে পারবেন। নিবিড় আগে সুস্থ হোক। এই হোক সবার প্রার্থনা।