কাজী সুলতানা শিমিঃ বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া, গত ১৩ই মে শনিবার সিডনিতে বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার। সকাল থেকে এর প্রস্তুতি শুরু হলেও জন সমাগম শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। এ বছর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশী ঘরানায় বৈশাখী শোভাযাত্রা। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে শোভাযাত্রার জন্য মুখোশ সহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য অনেককিছু আনানো হয়। দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় বৈশাখী শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় বড়োরা সহ এ প্রজন্মের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করে। বলা বাহুল্য এবারই প্রথম এই শোভাযাত্রার আয়োজন করায় তারা উচ্ছ্বাসের সাথে আগামীতেও বৈশাখী মেলা ও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
শোভাযাত্রার পর এ এন জেড স্টেডিয়ামের ভিতর গ্যালারীর মঞ্চে শুরু হয় উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান। ডঃ আব্দুর রাজ্জাক বৈশাখী মেলার প্রথম উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াত রুহুল উজ্জ্বলকে স্মরণ করেন। অতঃপর সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেন। এ মেলা উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল এবং বিরোধী দলীয় নেতা বিল শার্টোণ বিশেষ বাণী দিয়েছেন।
সিডনির সুপরিচিত অলিম্পিক পার্কের প্রধান এএনজেড অলিম্পিক স্টেডিয়ামের এ মেলা উপলক্ষে সেদিন হাজির হয়েছে হাজারো প্রবাসীরা। অতান্ত ব্যায়বহুল এই ভেনুটির ভাড়াই প্রায় এক কোঠি দশ লাখ টাকার মতো। তবুও সিডনি ছাড়াও অন্যান্য প্রদেশ থেকেও প্রবাসীরা যোগ দেন এ মেলায়। শাড়ী চুড়ির বাহারি সাজে নারী-পুরুষেরা দেশীয় সাজে বৈশাখ উৎযাপন করেন। ডাক-ঢোল, নাচে-গানে ও সাজ-সজ্জায় এ যেন বাংলার ঐতিহ্যের পুরপুরি পরিবেশ। মেলায় পার্কের চারদিকে ঘিরে বিভিন্ন স্টল বসানো হয়। এরমধ্যে নানা ধরণের দেশীয় খাবার, সন্দেশ, পিঠা,পুলি, ঝালমুড়ি, বাহারি পোশাক ও রকমারি শাড়ী, চুড়ি, পোশাক এবং বইয়ের সমারোহে এক মুখরিত বাংলাদেশ হয়ে উঠে এ এন জেড স্টেডিয়াম।
বৈশাখী মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর কোনও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু পদক। এবার এই পদক দেওয়া হয়েছে সিডনির চিলড্রেন হসপিটালকে। শিশু চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার এই হাসপাতালকে সম্মাননাটি দেয়া হয়েছে। সাংস্কৃতিক পর্বে চমৎকার সব পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন স্থানীয় শিল্পীরা। এতে গান, একক নৃত্য, দলীয়-নৃত্য, আধুনিক গান, নাটক ,আবৃত্তি, ফ্যাশন-শোসহ বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর আয়োজনে শিশু-কিশোরসহ উপস্থিত সকলেই বেশ উপভোগ করেন। এছাড়া বাংলা স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাও পরিবেশনায় অংশ নেন। সাংস্কৃতির পর্ব কয়েকটি ধাপে সাজানো হয়। সদ্য প্রয়াত কণ্ঠ শিল্পী লাখি আখন্দকে স্মরণ করে গান পরিবেশন করা হয়। সিডনির স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান পরিবেশনায় এসো বাংলায় গান গাই” ছিল উল্লেখ করার মতো। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেফিন শুভ অভিনীত পথ প্রোডাকশনের I am Thy Father” মঞ্চ নাটকটি ছিলো একটি অভূতপূর্ব পরিবেশনা। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এন্ড্রু কিশোর।এবার আতসবাজির পরিবর্তে করা হয় লেজার শো।
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এটাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বৃহৎ মিলন মেলার একটি। এ দিন নানা উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রবাসী বাঙালিরা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করলেও অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি আমেজ ও আনন্দের ছিল অনবদ্য সমারোহ। অস্ট্রেলিয়ায় বৈশাখ উদযাপনের এই ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধিসহ রাজ্যের স্থানীয় এমপিবৃন্দ ও স্থানীয় বাংলা কমিউনিটির নেতারসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। সংগঠনের সভাপতি শেখ শামীমুল হক মেলায় অংশ গ্রহন করার জন্য আগত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও জানান, মেলায় জনসমাগম ক্রমাগত বাড়ার কারণে আগামীতে আরো বড় পরিসরে মেলার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। উল্লেখ্য, এ বারের মেলায় বাংলাদেশী বাঙালি ছাড়াও কোলকাতা ও অস্ট্রেলিয়ানরাও যোগ দিয়েছেন।এছাড়াও এদেশের মূল মিডিয়া গুলোও এ মেলাকে গুরত্বের সাথে বিবেচনা করেছে।