‘রাবেয়াকে জীবিত রাখা হয়েছিল রাজারবাগে মরদেহ পরিষ্কারের জন্য’

‘রাবেয়াকে জীবিত রাখা হয়েছিল রাজারবাগে মরদেহ পরিষ্কারের জন্য’

১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনী প্রথম হামলাটি করেছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে।

রাত তখন আনুমানিক ১১টা। সবার মধ্যে কম-বেশি খবর থাকলেও প্রথম হামলাটি যে পুলিশের উপর হবে সেটা হয়ত অনেকের ধারণা ছিল না।

পুলিশ লাইন্সে হামলার সাথে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে অন্য সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক করে দেন তৎকালীন কনস্টেবল আব্দুল আলী।

পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে সেই ঘণ্টাটি। রেলের পাতের মত দেখতে সেই ঘণ্টার সামনে দাড়িয়ে মি. আলী আমার কাছে বর্ণনা করছিলেন সেদিনের রাতের কথা।

তিনি বলছিলেন, “সেই বিভীষিকাময় কালরাত্রিতে সাড়ে ১১টার দিকে খুব দ্রুত আমি এই পাগলা ঘণ্টা বাজাই। প্রায় দুই মিনিট ধরে বাজাই। এই ঘণ্টার শব্দ শুনে সমস্ত ফৌজ একত্রিত হয়ে গেল। নিজের দেশের স্বার্থেই আমি সেদিন এই কাজটি করেছি”।

পুলিশের এই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে তখনকার ব্যবহার করা নানা ধরণের অস্ত্র, সৈনিকদের ব্যবহার করা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা বেতার ও ওয়ারলেস সংরক্ষণ করা হয়েছে। তখনকার সাব ইন্সপেক্টর শাহজাহান মিয়া বলছিলেন সেই মুহূর্তের কথা।

“এই ওয়ারলেসের মাধ্যমে আমি সারা বাংলাদেশে একটি বার্তা ইংরেজিতে ছড়িয়ে দিলাম। আমি বলেছিলাম ‘উই আর অলরেডি অ্যাটাক্ড বাই দ্যা পাক আর্মি, ট্রাই টু সেভ ইউরসেল্ফ”।

তবে এসবের বাইরে একটি বই রয়েছে সেখানে লেখা পাকবাহিনী কর্তৃক রাজারবাগ ব্যারাকে নির্যাতিত সুইপার রাবেয়ার ভাষ্য।

তার জবানীতে লেখা সেই বই এর এক পৃষ্ঠা উল্টে দেখতে এক জায়গায় চোখ আটকে গেল।

সেখানে লেখা আমাকে মেরোনা, আমাকে মাররে তোমাদের পুলিশ লাইন রক্ত ও লাশের পঁচা গন্ধ মানুষের বাস করার অযোগ্য হয়ে পড়বে। যাদুঘরে কর্মরত সার্জেন্ট ইমরান বলছিলেন রাবেয়াকে মূলত জীবিত রাখা হয় মরদেহ পরিষ্কার করার জন্য।

তবে পুলিশের এই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর তৈরি মেটেও সহজ কাজ ছিল না। কারণ একটি যাদুঘর তৈরির জন্য মানুষকে দেখানোর জন্য যেসব জিনিস দরকার সেসব কিছু সংগ্রহ করায় ছিল মূল চ্যালেঞ্জ।

যাদুঘরের পরিচালক আবিদা সুলতানা বলছিলেন – পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ভাবেও নানা জনের সাথে কথা বলতে হয়েছে। যারা সেইসময় রাজারবাগে কর্মরত ছিলেন তাদের সাথে, অনেক সময় এর আশেপাশের বাসিন্দাদের সাথেও।

“তিনি বলছিলেন আমরা মর্টার-শেলের অংশবিশেষ পাই একজনের বাসা থেকে। তিনি নিজেই এসে দিয়ে যান। এটা তারা ফুলদানি হিসেবে ব্যবহার করতেন”।

২৫শে মার্চের ঐ রাতে ঠিক কত পুলিশ সদস্য নিহত হয় তার কোন সঠিক হিসেবে নেই তবে বলা হয় শতাধিক পুলিশ সদস্য নিহত হয়।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরণ লুঠ করা হয়। পাকিস্তান বাহিনীর ওয়ারলেস বার্তা থেকে তা জানা যায়। (বিবিসি বাংলা)