আমরাও জাপানে বৈশাখ উৎসব করি

আমরাও জাপানে বৈশাখ উৎসব করি

বৈশাখী মেলা শব্দটা কানে ঢুকলেও আমাদের গ্রামে কিংবা আশেপাশের গ্রামে ওটার অস্তিত্ব ছিল না । মেলা বলতেই কানে ঢুকত দূর্গাপুজার মেলা, কালীবাড়ি মেলা ও জন্মাস্টুমি । নামগুলোই বলে দিত ওগুলো আমাদের ধর্মের না । তাই মেলায় যাওয়ার জন্য মন পাগলা হলেও আশেপাশের পরিবেশ একটু বেশীই নিষেধ করত না যেতে । চোর না শোনে ধর্মের কাহিনীকে সত্য প্রমানিত করে মিস করতাম না মেলায় যাওয়া । অস্টুমি মেলার বাজার ছিল কাচা আম কেটে খাওয়ার চাকু । বালুর স্তর পরে জিলাপীর ওজন দিগুন হওয়া জিলাপী ও সদাইয়ের লিস্ট ঢুকতে যেবার পয়সার আমদানি বেশী হত । কেননা মেলাগুলি নদীর ধারের চড়েই বসত বেশী । স্কুলের ধর্মের ক্লাস ফাকি দিয়ে ভরতখালীর কালিবাড়ী মেলায় গিয়েছি স্কুল জীবন প্রায় প্রতি বছর । মেলায় তরমুজ চুড়ি কমিটির সদস্য ছিলাম না তবে চোরাইমাল ভক্ষন করেছি পাপের কথা বেমালুম ভুলে যেয়ে ।

ধর্মের ক্লাস ফাকি দেয়ার পাপ ও চুরির মাল ভাঙ্গার বর্গাগার পাপের মোচন হত হেড মওলানা স্যারের বেতের আঘাতে । গতকাল ফেসবুকে সেই কালিবাড়ী মেলার খবর নস্টালজিক বানালো আমাকে । এখনো চলছে সেই মেলা । সেই বটগাছ, সেই ঢাকের শব্দ নিমিষেই নিয়ে গিয়েছিল ১৩-১৪ বছরের বয়সটাতে … দূর্গাপুজার মেলায় যাবার কথা আব্বার কানে গেলে ১৪৪ ধারা জারি হত ভাতের উপর । মা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতো গোপনে । আমাদের পাকস্থলিও ভাত নামক খাদ্য দেখতো অসময়ে ।

বৈশাখী মেলার অস্তিত্ব দেখলাম ঢাকায় এসে । মঙ্গল শোভাযাত্রা শব্দটাও তখনি শুনেছিলাম । রমনার বটমুলে গিয়েছি দু একবার । ছোটবেলায় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহটা ভার্সীটির ফ্রি জীবনে একটু মজা কমই দিত । মিস করতাম গ্রামের হালখাতা নামক জিলাপী খাওয়ার অলিখিত অনুষ্ঠানগুলোকে । দোকানের উপর চকমকা হালখাতার পোষ্টারগুলো চোখে অংকিত হলেও চিহ্বায় জল আসতো জিলাপীর কথা চিন্তা করে । আগের বছর লাভ বেশী করা দোকানের মালিকরা ডিক্লেয়ার দিত পেটপুর্তির । বুঝলেন না ! যে যত খেতে পারে । আমার ভাগ্য আসে নাই সেই পেট মাপার সুযোগ । বন্ধুদের অনেককেই লুকিয়ে কাঁচা মরিচ নিয়ে যেতে দেখেছি । হালখাতার পোষ্টারগুলো চোখে পরে না অনেকদিন ।

জাপানীর ধারালো ছুড়ি দিয়ে আপেল ছেলার সময় মনে পরে অস্টুমি মেলায় কেনা চাকুর কথা । বটমুলে কম যাওয়ায় এখন আপসোস হয় যখন লাইভ দেখি ফেসবুকে । মাটি দিয়ে বানানো হাতি ঘোড়াগুলির দাম এখানে আকাশচুম্বী । তাই কেনা হয় না । ছেলেকে বাংলাদেশী কালচার শেখানোর সুযোগ কম । ছেলেমেয়েরা পরিবারিক নিয়ম ভঙ্গ করলে বাবাদের কেমন লাগে সেটারো অভিজ্ঞতা কম এখানে । বর্ষবরণ করতে পাশের সিটিতে যাওয়া লাগে । গড়াই মাছের ভর্তা মনে করিয়ে দেয় একসময় খেয়েছিলাম এইসব । দেয়ালে আটকানো বটগাছের ছবি দায়িত্ব নেয় বটতলার । ইউটিউব দায়িত্ব নিয়ে শোনায় এসো হে বৈশাখের ! সবশেষে ভাগে পরা টাকা দিতে গেলেই মনে হয় সাজানো বর্ষবরন শেষ হয়েছে

( মোঃ মাহবুবর রহমান , তোত্তরি, জাপান )
মোঃ মাহবুবর রহমান , তোত্তরি, জাপান