আবার আমরা আশাবাদী

আবার আমরা আশাবাদী

আমি সবসময় একজন খুব আশাবাদী বাংলাদেশী হিসাবে জীবন পার করছি (যে কারণে অনেক সময়ই কঠিন সব বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যও শুনছি), এবং যে সবসময় বিশ্বাস করি যে দেশে পরিবর্তন আসবেই, দুর্নীতি এবং অন্যায় কমবেই আর অন্যায়কারীদের শাস্তি পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে!! কারণ পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছি, কখনোতো অন্যদের চেয়ে শিক্ষায় বা মানসিকতায় বা মানবিকতায় বা সততায় বা আত্মসম্মানবোধে নিজেকে ছোট মনে হয় নাই (দেশীয় মানে আমি কিন্ত খুবই কঠিন mediocre ছাত্রী/মানুষ)। যেহেতু আমি মনে করি আমার মতো কোটি কোটি মানুষ দেশে আছে অতএব সবসময় মনে হয়েছে এই দেশ কিভাবে না বদলায়??!! (Disclaimer – আমি সম্পূর্ণভাবে একজন Made in Bangladesh মানুষ এবং never felt less for that.)

সবার মতো গত কয়েকদিন যাবৎ বাচ্চাদের সাহস, পোস্টার তৈরির বুদ্ধিমত্তা, সবাইকে এক করার তৎপরতায় আমার আশাবাদী হওয়ার পারদ আরো উপরে উঠেছে। ওরা যে ধাক্কাটা দিয়েছে এইটা কিন্তু শুধু নিরাপদ সড়ক চাওয়ার ধাক্কা না, ওরা দেখিয়ে দিয়েছে যে ওরা সহ্য করতে পারছে না দুর্নীতিবাজ পুলিশকে, লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো ড্রাইভারদের, আইন অমান্য করে উল্টা দিকে গাড়ি চালানো মন্ত্রীদের (ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীরা ভাগ্যবান যে এইসময়টায়  ওরা কেউ এই কাজটা করছিল না ! যে ব্যাপারটা অনেক ভালো লাগলো, ওরা একজন মোটরসাইকেল চালক পুলিশের কাছে  লাইসেন্স না পেয়ে তার মুখের সামনে “ভুয়া ভুয়া” বলছিলো, কত অল্পতে কত বড় অপমান। এই ব্যাপারটা আমার অনেক সময়ই করতে ইচ্ছা করতো আমার অনেক সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীর সামনে, যারা দামি দামি গাড়ি চালায়, বা গুলশান বনানী বারিধারাতে বাস করে ট্যাক্স না দিয়ে, বা যারা ঘুষ খায় বা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতো যে বাংলাদেশে ঘুষ দেয়া ছাড়া কিছু হয় না।। ইসসসরে এখনো যদি পারতাম ওদের সামনে যেয়ে এই বাচ্চাদের মতো “ভুয়া ভুয়া” বলতে। ইনশাআল্লা এদের বাচ্চারা হয়তো এদের মুখের সামনে এই কথা বলবে একদিন!!!

ভালমতো জানলাম বেশিরভাগ দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী এবং নেতাদের ছেলেমেয়েরা দেশে থাকে না, অতএব ওরা বুঝবে না বাংলাদেশে সবার জীবন কতটা ঝুঁকিতে আছে!। সত্যি কথা তবে আমিতো বলি আলহামদুল্লিলাহ যে এদের ছেলেমেয়েরা দেশে নাই. এবং দোয়া করি এরা যেন বিদেশেই থেকে যায়, কারণ হচ্ছে সবক্ষেত্রে না হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই “A apple does not fall far from the tree.” এরাতো দেশে এসে এদের বাপ-মাদের মতোই দেশকে বিক্রি করে খেয়ে বেঁচে থাকবে। দেশের ক্ষমতাতো যাওয়া উচিত সেইসব ছেলেমেয়েদের হাতে, যাদের বাবা-মায়েরা কঠোর পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সৎ উপার্জনে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত মানুষ করছে। মানুষের টাকাওয়ালা মানুষের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা কমাতে হবে, টাকার উৎস জানার আগ্রহ বাড়াতে হবে!

বিদেশের জীবন – কিছু না বলি! কিছুদিন আগে আমি মুগ্ধভাবে প্রশংসা করি এমন একজন ছেলে দুঃখ নিয়ে যা বললো, তাতে মনে হলো ও বিদেশ আসতে পারছে না বলে ওর জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে! আমি দুঃখ পেয়েছি, কারণ ও আমার দেখা অল্প কিছু তরুনের একজন যে নাকি দেশের জন্য কিছু করছে… আমি জানি যারা দেশের নাম করা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে বিদেশে চলে আসে তারা পাশ্চ্যাতের এইসব দেশের অনেক সুবিধা নিয়ে একটা গুছানো জীবন পার করছে এবং নিজের ছেলেমেয়েদের অত্যন্ত সুশিক্ষায় মানুষ করছে। আমি যাকে বলি স্রোতে ভেসে চলা, কিন্তু আপনি যদি এমন কেউ হন যে জানেন আপনি স্রোতের বিপরীতে চলেও ভেসে থাকার যোগ্যতা রাখেন, সেইটা আপনি যেখানেই থাকেন না কেন, তাহলে দেশ থেকে শুধু নেয়ার না দেশকে দেয়ার যোগ্যতা আপনার আছে, এবং আপনি সেই গুটিকতক মানুষের একজন যে নাকি দেশের কাছে ঋণী না হয়ে দেশকে ঋণী করতে পারেন। আমার সবসময়ের বিশ্বাস – “কোথায় জীবন কাটাচ্ছি তা বড় কথা না, কিভাবে জীবন কাটাচ্ছি তাই বড় কথা।”

এই দেশকে ভালোবেসে, মনে আশা এই ছেলেগুলা যেন দেশেই থাকে কারণ আমি যে সারাদিনরাত মনে মনে জীবনানন্দ দাশের “আবার আসিব ফিরে” কবিতাটা আবৃতি করে যাচ্ছি. #সামাজিক#অসঙ্গতি

জেসমিন আরা ময়না