রাতের তারার গল্প – বৃহস্পতি গ্রহ আর লিব্রা তারকামণ্ডল”

রাতের তারার গল্প – বৃহস্পতি গ্রহ আর লিব্রা তারকামণ্ডল”

এই ছবিটা মোবাইলের এ্যাপ থেকে তোলা, যে তারাগুলো নিয়ে লিখেছি এই ছবিতে সবগুলোই আছে।

(নক্ষত্র নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের জন্য এই লেখা)
কাল বিকেলে কুইন্স রক বীচে হাঁটতে গিয়েছিলাম। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ডিমের কুসুমের মত সূর্যটা টুপ করে কিভাবে ডুবে গেল সাগরের জলে। সাঁঝের লালীমা মিলিয়ে আঁধার নামতে না নামতেই পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠল শুকতারা। শুকতারা যে শুক্রগ্রহ কে না জানে? আরেকটা গ্রহ শুকতারার উপরেই জ্বলছে দেখলাম – বৃহস্পতি! অনেকগুলো গ্রহই এখন পার্থের আকাশে তারার মত জ্বলছে, শুধু চিনতে পারাটাই সমস্যা। কখন, কোন দিকের আকাশে গ্রহগুলো দেখতে পাবেন সেটা জানা থাকলে অনেক সহজ হয় ব্যাপারটা। খালি চোখে গ্রহ ও তারা দেখার মাঝে এক অদ্ভূত আনন্দ আছে! সেই আনন্দের ভাগিদার যেন আপনিও হতে পারেন, তাই এই লেখা।
দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল এখন। পার্থে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সূর্য ডুবার পরপরই পশ্চিম আকাশে দেখা পাবেন বৃহস্পতি গ্রহের। শুকতারার একটু উপরেই এত উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে থাকে, চোখে পড়বেই আপনার। রাত ৯টার পরে ডুবে যাবে। শুক্রগ্রহ আর বৃহস্পতি দেখার পর একই আকাশে এদের আশেপাশের কিছু তারাও চিনে নেই তাহলে? এগুলো গ্রহ না, তারা বা নক্ষত্র। তুলা নক্ষত্র মন্ডলী নিয়েই শুধু লিখব আজ, কারণ আমি তুলা রাশি ?

লিব্রা বা তুলা নক্ষত্রমণ্ডলে চারটা উজ্জ্বল তারা নিয়ে আকাশের গায়ে একটা চতুর্ভূজ কল্পনা করা যায়। এই চতুর্ভূজকেই জ্যোতিষশাস্ত্রে কাল্পনিক দাঁড়িপাল্লা হিসেবে দেখা হয়। গ্রীক মিথলজিতে ন্যায়ের দেবী ডাইককে এই তুলারাশির দাঁড়িপাল্লাসহ চিত্রায়িত করা হয়। ডাইক হল জিউস ও থেমিসের মেয়ে। খ্রীষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে রোমানরা লিব্রাকে দাঁড়িপাল্লার সাথে তুলনা করে। কিন্তু খ্রীষ্টের জন্মের হাজার বছর আগেই ব্যাবিনলীয় সভ্যতায় লিব্রা “স্বর্গের দাঁড়িপাল্লা” হিসেবে পরিচিত ছিল। তারা এর নাম গিয়েছিল ZIB.BA.AN.NA. এই দাঁড়িপাল্লা হল ভারসাম্যের প্রতীক – দিন ও রাতের মাঝে ভারসাম্য, ঋতুর মাঝে ভারসাম্য।

এই নক্ষত্রমণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম “বিটা লিব্রী”, বাংলা নাম “সৌম্যকীলক” আর পাশ্চাত্য নাম Zubeneschamali. এই নামের উৎপত্তি আরবী শব্দ al-zuban al-šamāliyya থেকে। ল্যাটিন নাম Lanx Borealis যার অর্থ “the northern scale.” পৃথিবী থেকে ১৬০ আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান।

দ্বিতীয় উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম “আলফা লিব্রী”, বাংলা নাম “বিশাখা” আর পাশ্চত্য নাম Zubenelgenubi. এই নামের উৎপত্তি আরবী শব্দ al-zuban al-janūbiyy থেকে। ল্যাটিন নাম Lanx Australis যার অর্থ “the southern scale.” এটি আসলে জোড়াতারা। আজকের রাতের আকাশে বৃহস্পতি গ্রহের একটু নীচে ডান পাশেই এর দেখা পাবেন।

আলফা লিব্রী এবং বিটা লিব্রী – এই দুই নক্ষত্র দিয়ে তুলারাশির দাঁড়িপাল্লার দাঁড়টি কল্পনা করা হয়। আর পাল্লাদুটোর তারা হল গামা লিব্রী এবং সিগমা লিব্রী। গামা লিব্রীর পাশ্চাত্য নাম Zuben-el-Akrab, আরবী অর্থ “claw of the scorpion”. এটা থেকেই বোঝা যায় তুলা একসময় বৃশ্চিক রাশির অংশ ছিল। সিগমা লিব্রীর অপর নাম Brachium. পশ্চিম আকাশে শুক্র এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে বাম পাশে দেখতে পাবেন এই তারাটিকে।

এই হল মোটামুটি তুলা নক্ষত্রমন্ডলের উজ্জ্বলতম চারটি তারা পরিচিতি। নীচের ছবিতে বাম পাশে Menkent যে তারাটি দেখতে পাচ্ছেন, সেটি সেন্টরাস মন্ডলের ৪র্থ উজ্জ্বল তারা আর Syrma (বাংলা নাম শ্রীমাতা) যে তারাটি দেখছেন সেটি কন্যা রাশি বা Virgo তারকামণ্ডলের অংশ। তাদের গল্প হবে আরেকদিন।

তানজিম স্নিগ্ধা