ফজলুল বারী:খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বুধবার হাইকোর্টে পৌঁছেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন মন্তব্য করে লিখেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বুঝতে পেরেছে সরকারের সময় শেষ! সে কারনে এবার দেরি না করে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতের কাছে পৌঁছে দিয়েছে! যদিও বাস্তব তথ্যটি ভিন্ন। আগেরবার একই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালেদার চিকিৎসা প্রতিবেদন আপিল বিভাগে পৌঁছাতে দেরির কারন উল্লেখ করে সময় চায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন মেডিক্যাল বোর্ডের সব সদস্যের প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে ওই দেরির মুখে পড়ে বাড়তি সময় চেয়ে নেয়। বিএনপির আইনজীবীরা তখন আপিল বিভাগে নজিরবিহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বলেছিল, এর মাঝে যদি খালেদা জিয়ার কিছু ঘটে যায় এর দায়দায়িত্ব কে নেবে। ওই প্রতিবেদন হাতে আসার পর জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আপিল বিভাগ বেগম জিয়ার সম্মতির ভিত্তিতে এডভান্সড চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছিল।
কিন্তু নানা সূত্র বলছে বেগম জিয়া আপীল বিভাগ উল্লেখিত এডভান্সড চিকিৎসায় সায় দেননি। এরজন্যে বেশ কিছুদিন ধরে এক রকম চিকিৎসাবিহীন দিন কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া! আর তাঁকে দেখে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তাঁকে কোন চিকিৎসাই দেয়া হচ্ছেনা, তাঁর অবস্থার আরও অবনতির কথা বলে আসছিলেন খালেদা জিয়ার বোন। আর্থাইটিজের চিকিৎসা হিসাবে বেগম জিয়াকে এখন ইনজেকশন এবং থেরাপি দেবার কথা। কিন্তু এতে সায় না দেয়ায় তাঁর অবস্থার অবনতির কথা বলে আসছেন বোন সেলিমা ইসলাম। আর চিকিৎসা বলে আসছিলেন খালেদা সায় না দেয়ায় তারা তাঁর কেবিনেই ঢুকতে পারেননা। বিএনপি বলে আসছে খালেদা জিয়া হেঁটে হেঁটে শেষ দিন কোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেননা। বিএনপি চেয়ারপার্সনের দুটি হাত বেঁকে যাবার কথা বলেছেন বোন সেলিমা ইসলাম। চিকিৎসকদের সহায়তা না করায় চিকিৎসা দিতে না পারায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে প্রতিবেদন দিতেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সময় লাগেনি।
আগে খালেদার আর্থাইটিজের সমস্যা ছিল দুই পায়ে। ওই অবস্থাতেই তিনি দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী, এক মেয়াদে বিরোধীদলের নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কোর্টে যাতায়াতে কখনো শিরিন সুলতানা, কখনো মিসেস আব্বাসের সহায়তা তাঁকে নিতে হয়েছে। এখন হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে নিতে হুইল চেয়ারের সাহায্য নিতে হয়। আবার খালেদা জিয়ার বোনের ব্যাখ্যামতে আর্থাইটিজের সমস্যা দুই হাতেও ছড়িয়েছে। আর্থাইটিজ কোন নিরাময়যোগ্য রোগ নয়। চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়। এরজন্যে রোগীকে সহায়তা করতে হয় চিকিৎসকদের। কিন্তু যতোটা জানা গেছে খালেদা জিয়া চিকিৎসকদের সহায়তা করছেননা। এরজন্যে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। চিকিৎসকদের সহায়তা না করায় খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিকসও নিয়ন্ত্রনে নেই। ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রনে না থাকলে অন্য শারীরিক সমস্যার চিকিৎসাও জটিল হয়ে ওঠে। ৭৩ বছর বয়সী এই নেত্রী এখন বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যার সম্মুখিন। খালেদা জিয়ার মূল শারীরিক সমস্যাটি এখন মানসিক। তিনি ক্ষমতায় নেই। কারাজীবনে তার মন ভালো থাকার কথা নয়। এটিই এখন তাঁর আসল অসুখ। মন খারাপ থাকলে আর্থাইটিজ সহ সব রোগের প্রকোপ বাড়ে।
কী কারনে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এডভান্স চিকিৎসায় সাড়া দেননি এর জবাব তৈরি করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। এর একটি ধারনা এর আগে দিয়েছেন বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের এক নেতা। ওই নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন সরকার সমর্থক। এরজন্যে তাদের চিকিৎসা আস্থায় নিতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপার্সন। কিন্তু বিএনপি এখন বলার চেষ্টা করছে চিকিৎসার জন্যে খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যেতে চান।
যদিও ওয়াকিফহালরা জানেন আর্থাইটিজের চিকিৎসা বাংলাদেশে যা, যুক্তরাজ্যেও তাই। আর্থাইটিজের ইনজেকশনও অনেক কষ্টের। হাড়ের ওপর দেয়া হয়। এরজন্যে হয়তো খালেদা ইনজেকশন দিতে রাজি হচ্ছেননা। কিন্তু চিকিৎসা চাইলে এই ইনজেকশনের বিকল্পও নেই। ইনজেকশন-ফিজিও থেরাপিই এখন তাঁর মূল চিকিৎসা। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন সরকারেরও এক ধরনের গলার কাঁটা। সরকারি নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট তারা প্যারোলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে চায়। প্যারোল মানে শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি। তাতে খালেদা জিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রনেই থাকবেন। কিন্তু যতোটা জানা যাচ্ছে অথবা ধারনা করা যায় তাহলো, প্যারোলে খালেদা জিয়া এবং বিএনপি রাজি নয়। তারা চায় জামিনে মুক্তি। প্যারোল না জামিন এই রাজনৈতিক চালাচালিতে দেরি হচ্ছে খালেদার মুক্তি! বিএনপি এবার কোর্টকে বলতে পারে খালেদা জিয়ার অবস্থা জানতে দেখতে তাঁকে সশরীরে আদালতে আনা হোক। এমন আবেদনে আদালত সাড়া দেয় কীনা তা দেখতে জানতে বৃহস্পতিবার সবার দৃষ্টি আদালতের দিকে থাকবে। খালেদার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের আদালতে ডেকে তাদের বক্তব্যও শুনতে চাইতে পারে আদালত।