ফজলুল বারী: মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাস সংগ্রহের জন্যে আমি যখন সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম তখন লোকজন আমার মতো একজন ভবঘুরে বাউন্ডেলে লোক দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার খাতায় অটোগ্রাফের মতো তাদের নানা প্রতিক্রিয়ার কথা লিখতেন।
এর অনেক মন্তব্য এখনও আমার কাছে বাইবেলের বানীর মতো মূল্যবান মনে হয়। যেমন এক শিক্ষক লিখেছিলেন, ‘যে যাহা করেন তাহার একটি সুন্দর পরিণতি সকলের কাছে প্রশংসিত হয়। ব্যর্থ মানুষের নিন্দার শেষ থাকেনা’।
কর্নেল তাহেরও আজ বৈষয়িক বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন তেমন অনেকের কাছে আপাত সাদা চোখে ব্যর্থ এক বিপ্লবীর নাম! তাঁর স্বপ্ন-লক্ষ্য পূরন হয়নি। কাজেই তাঁর নিন্দার শেষ নেই! যে বিপ্লবের ডাক দেয়! কিন্তু নিজে ক্ষমতায় বসতে চায় না!
এমন লোকজন আজকের যুগে বিরল। এখনকার যুগে যেখানে যে কারও একটা চাকরি বা পুরস্কার যখন সবচেয়ে মহার্ঘ বিবেচনা পায়, এটিই মোটামুটি গড়পড়তা এইম ইন লাইফ! সে ক্ষেত্রে বিষয়টি অস্বাভাবিক বৈকি।
এক সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার প্রায় সবাই পরষ্পরের বন্ধু ছিলেন! আবার সবার মুরব্বি-নেতা ছিলেন একজন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি সেনা অফিসারদের বন্ধুত্বের একটা গল্প বলি।
এরশাদ আমলে সেনাবাহিনীতে একজন আলোচিত অফিসার ছিল মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশু। তখন বাঙালি সেনা অফিসার কেউ ঢাকায় এলেই তাদের প্রায় এবাই জেনারেল শিশুর বাংলা মোটরের বাড়িতে উঠতেন।
কারন তখন আর কোন বাঙালি সেনা অফিসারের ঢাকায় বাড়ি ছিলোনা। জেনারেল শিশুর ঢাকার বাড়িতে তখন আবার একটি পারিবারিক গাড়িও ছিল। তাই ঢাকায় ফ্রি থাকা-খাওয়া-গাড়ির জন্যেও এই বাড়িটা সবাই পছন্দ করতেন।
জেনারেল শিশুর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান সানি জিয়ার অধীনে যুদ্ধ করেছেন। আগরতলা থেকে এই সানিকেই জিয়া খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাবার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। কারন খালেদা সানিকেও চিনতেন।
কিন্তু খালেদা সানির সঙ্গে যাননি। পচাত্তরের ওই সময়ে তাহেরের বন্ধু বাছাই যে ভুল ছিল তা এর মাশুল তিনি জীবন দিয়ে দিয়েছেন। এলিফ্যান্ট রোডে পিপলস পত্রিকার সম্পাদকের বাসায় জিয়াকে নিয়ে যাবার জন্যে সৈনিকদের পাঠান তাহের।
তাদের প্ল্যান ছিল সেখান থেকে তারা জিয়াকে নিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন! বলতে ভুল নেই সেদিন তাহেরও এমন জিয়া নামের কাঁঠাল গাছে আম আশা করেছিলেন! জিয়াও ততোক্ষনে অন্য চক্করে পড়ে গেছেন।
তাহেরের পাঠানো সৈনিকদের সঙ্গে তখন জিয়া অভিনয় শুরু করে দেন! তাদেরকে বলেন, ‘আমার বন্ধু তাহের কেনো সেনানিবাসের বাইরে থাকবে। এটা হতে পারেনা। তাকে এখানে নিয়ে আসো’। সৈনিকরা জিয়ার অভিনয় ধরতে পারেনি।
তারা যখন শূন্যহাতে এলিফ্যান্ট রোডে ফেরত যায় তখনই জিয়ার প্রতারনা ধরতে পারেন তাহের। আমার একটি ধারনা নিজের শারীরিক পঙ্গু্ত্বের বিষয়টি মাথায় রেখেও তাহের সেদিন নিজের বিকল্প হিসাবে জিয়ার কথা ভেবে থাকতে পারেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ধানুয়া কামালপুরের যুদ্ধে একটা পা হারান তাহের। শারীরিক প্রতিবন্ধী কাউকে কী তখন ক্ষমতায় গ্রহনে প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ? কারন সবাই জানেন বাংলাদেশে ক্ষমতায় যেতে থাকতে নানাকিছু বিবেচনা পায়।
ক্ষমতা কব্জা করতে নিঃসন্তান এরশাদকে তখন তড়িঘড়ি একটা সন্তানের ব্যবস্থাও করতে হয়েছে। আতাউর রহমান খানের ‘প্রধানমন্ত্রিত্বের নয় মাস’ বইতে এরশাদের এই সন্তান জোগাড়ের বৃত্তান্ত আছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা সহ ক্ষমতায় এসেও আওয়ামী লীগ জিয়া-এরশাদের সাংবিধানিক মুসলমানিকরনের বাইরে যেতে পারেনি। আবার সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষ’ টার্মটিও লেখা আছে!
আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগের এই প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ের প্রিয় একটি কটাক্ষ শব্দ ‘বামাতি’! কিন্তু দলের গঠনতন্ত্রে, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিতে ‘সমাজতন্ত্র’ কথাটি এখনও লেখা। সমাজতন্ত্র কী বামাতিদের অর্থনৈতিক কর্মসূচি নয়? আওয়ামী লীগেরটা কী?
পচাত্তরে চতুর জিয়া তাহেরের সঙ্গে প্রতারনা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। এরপর আবার কৃতঘ্ন জিয়ার কাছে তাহেরকে প্রানে বাঁচিয়ে রাখার মতো বিপদজ্জনক ব্যক্তি মনে হয়েছিল। তাঁকে তিনি বাঁচিয়ে রাখেননি।
এটিই অবশ্য বিএনপি-জামায়াতের ‘স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের বিচারের’ নমুনা! তাহের ছিলেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাহেরের আগে বা পরে পৃথিবীতে শারীরিক প্রতিবন্ধী কারও ফাঁসি হয়নি।
এখন পন্ডিতরা কথায় কথায় ‘সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলার’ বয়ান দেন! বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কী সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ছিল? সুশৃংখল সেনাবাহিনীর লোকজন কী জাতির পিতাকে হত্যা করে? ‘বিএনপি জামায়াতের মুখস্ত বয়ান’ এখন কারা দিচ্ছেন!
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এরজন্য প্রতারক জিয়াকে তিরস্কার করা হয়েছে। বেঁচে থাকলে তাহের হত্যার জন্যে জিয়ার বিচারও হতো। তাহেরকে যথাযথ মর্যাদার আসন এবং পরিবারকে ক্ষতিপূরন দিতে বলা হয়েছে সরকারকে।
কিন্তু তাহেরের পরিবারটি আবার অন্য রকম একটি পরিবার। তাহের তাঁর পরিবারের জন্যে কোন সম্পদ রেখে যাননি। পরিবারের দায়িত্ব তিনি দেশের মানুষকে দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর তখন তিনটি শিশু সন্তান ছিল।
স্বামীকে ফাঁসিতে হত্যার পর লুৎফা তাহের ছোট একটি চাকরি করে ছোট তিনটি বাচ্চাকে মানুষ করেছেন। জিয়া-এরশাদ এমন অনেক পরিবারকে বাড়ি-অনুদান সহ নানাকিছু দিয়েছে। কিন্তু মিসেস তাহের তাদের কাছ থেকে কোন কিছু নেননি।
এরজন্য এই পরিবারটি এখনও সবার কাছে মর্যাদার আসনে আসীন। শেখ হাসিনা মিসেস তাহেরকে সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপি করে তাহেরকেও সম্মানিত করেছেন। আদালতের রায়ের পরেও সরকার থেকে কিছু চায়নি-নেয়নি এই পরিবার।
শুধু পারিবারিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের শিকার মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারকে আদালত যে মর্যাদা দিয়েছে এতেই তারা কৃতজ্ঞ। প্রতি বছর ২১ জুলাইর আগে পরে তাহেরকে নিয়ে নানা রকম লেখালেখি হয়।
তাহেরের অনুসারী রাজনৈতিক সক্রিয় লোকজন এখন কম। তাঁর অনুসারীদের কেউ এরমাঝে আওয়ামী লীগ কেউ বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছেন। অথবা তাদের অনুগ্রহপ্রার্থী। দুই খন্ড জাসদ আওয়ামী জোটের সঙ্গে আছে।
এক খন্ড জাসদ বিএনপির সঙ্গে, এক খন্ড মান্না বিএনপির সঙ্গে আছেন। তাহেরের ছোট এক ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এখন খাঁটি একজন আওয়ামী লীগার এবং এমপি। এক ভাই ডঃ আনোয়ার হোসেনকেও আওয়ামী লীগার মনে হয় সবার কাছে।
আরেক ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদকে এ পরিবারের সবাই দাদা ভাই ডাকেন। দাদা ভাই শেখ হাসিনার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আওয়ামী লীগের লোকজন যখন অনেক কম তখন তিনি শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর পরামর্শে তখন তিনি একাধিক সভা-সেমিনার করেছেন। তাঁর তখন একটাই চিন্তা ছিল হুজুর-মোল্লা-মৌলভীরা কেনো আওয়ামী লীগের বিপক্ষ শিবিরে থাকবে।
কারন আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাতো কোন ইসলাম বিরোধী দল নয়। মুক্তিযুদ্ধের একজন সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এই দাদা ভাই। কিন্তু একটু অন্য রকম ছিলেন। যুদ্ধের সময় সবাই যার যার নামে সেক্টর-সাব সেক্টরের নামকরন করেছেন।
শুধু দাদা ভাই তাঁর সাব সেক্টরের নামকরন করেছিলেন তার সামনে শহীদ একজন মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দিনের নামে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই পরিবারই একমাত্র এবং অন্য রকম একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।
বাংলাদেশের সমাজটা অনেকটা এমন, সাধারনত এক পরিবারে চার ভাই থাকলে চার পার্টি করেন। এরজন্যে এসব পরিবার সব সময় ক্ষমতাসীন দলে থাকে। এক পরিবারে এক ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবার এক ভাই বা বাপ রাজাকার এমনও আছে।
এরজন্যেও যুদ্ধের পরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যায়নি। কিন্তু কর্নেল তাহেরের পরিবারটি এমন একটি পরিবার যে এই পরিবারের ছেলেমেয়ে সব ভাইবোন যুদ্ধে যান। কর্নেল তাহের পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস হচ্ছে তারা মূলত বাড়ি পালানো ছেলে। বাবা-মা রাজি ছিলেননা। এরপরও তারা পালিয়ে যুদ্ধে গেছেন। কিন্তু তাহেরের বাবা-মা ছেলেমেয়েদের যুদ্ধে পাঠিয়েছেন।
এরজন্যে পাকিস্তানিরা তাদের নেত্রকোনার গ্রামের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ জিয়ার বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে কিন্তু কোন পাকিস্তানি একটা ঢিলও ছোঁড়েনি। তাহেরের ভাইবোন কেউ ভারতে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষনও নেননি।
কারন অস্ত্র প্রশিক্ষন তাদের আগেই নেয়া ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে থাকতে তাহের যখন ছুটিতে বাড়িতে আসতেন তখন ভাইবোনদের তিনি অস্ত্রের প্রশিক্ষন দিতেন। কারন দেশ স্বাধীন করা, বিপ্লবের স্বপ্ন তাঁর অনেক আগের।
কোন দিন যুদ্ধ করতে হলে সমর্থন পাওয়া যাবে কিনা এটি জানতে ছোটভাই সাঈদকে তিনি একবার আরাকান আর্মির কাছেও পাঠিয়েছিলেন। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তাদের কাছে পৌঁছার কথা আবু সাঈদ আহমদ একবার ঘটনাটি আমাকে বলেছেন।
আবার তাঁর ভাই ড আনোয়ার হোসেন একবার বলেছিলেন একাত্তরের মার্চের দিকে কর্নেল তাহের যদি দেশে থাকতেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির বিষয়টি ভিন্ন রকম হতে পারতো। এর সবই অবশ্য ‘যদি’র বিষয়।
কিন্তু দেশপ্রেমিক এই মুক্তিযোদ্ধাকে বিএনপি-জামায়াতওয়ালারা বরাবর লিখেন তাহের একজন বিশৃখংলা সৃষ্টিকারী! তিনি নাকি সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন! আদতে তাহেরতো প্রথাগত সেনাবাহিনী ভেঙ্গেই দিতে চেয়েছিলেন!
মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁর এই প্রস্তাব গ্রহন না করার তিনি সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। কারন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মতো এটিও প্রথাগত সেনাবাহিনী হয়েছে! পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেমন অভ্যুত্থান প্রবন, এখানেও তাই হয়েছে।
নানা কারনে এখন বিএনপি জামায়াতের তাহের লিখিয়েরা দৌড়ের ওপর আছেন। কিন্তু তাদের লেখাটিই এবার লিখেছেন আমাদের প্রিয় একজন সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ! কিছু ভুলও তথ্যও তিনি দিয়েছেন।
যেমন আমি সারাদেশ ঘুরে যে সব যুদ্ধের বর্ননা পেয়েছি তাতে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধটি ধানুয়া-কামালপুরেই হয়েছে। সেই এলাকার স্কুলের শিক্ষকদের আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা এত মৃত্যুর কথা বলছেন, কিন্তু নিহতদের কবরগুলো কোথায়?
তারা আমাকে সামনের বিস্তির্ন ধানক্ষেতগুলো দেখিয়ে বলেন, এর সবই কবর ছিল। এগুলো কেউ সংরক্ষন করেনি। সেগুলো আবার ধানক্ষেত হয়ে গেছে! জাফর ওয়াজেদ ভাই সেটিকে যুদ্ধ না বলে ‘সীমান্তে মাইন বিস্ফোরন’ বলেছেন!
বলেছেন তাহেরকে তখন ‘বিদেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে’! বাংলাদেশের বিদেশতো তখন ভারত। বাংলাদেশিরা যুদ্ধটা করছিল ভারতীয় সমর্থনে। মুজিবনগর সরকারও তখন ভারতে বসে কাজ করছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর একজন সেক্টর কমান্ডার যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার উদ্ধার করে সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে দেখতে আসেন।
কিন্তু হঠাৎ করে জাফর ওয়াজেদের মতো একজন সিনিয়র-অভিজ্ঞ সাংবাদিক কেনো ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধকে ‘মাইন বিস্ফোরন’, কর্নেল তাহেরকে ‘বিদেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে’ লিখেছেন, এটা তিনি ছাড়া আর কেউ সঠিক বলতে পারবেননা।
এরজন্যে আমরা কেউ তাকে বিএনপি-জামায়াতের সাংবাদিক লিখে ফেলবোনা। কারন তাঁর যোগ্যতা-অবদান আমরা জানি। দূর্ভাগ্য হচ্ছে এই জাফর ভাইও কিন্তু একবার আমাকে বিএনপি-জামায়াতের সাংবাদিক লিখেছিলেন!
আমি তখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে সবিনয়ে জানতে চেয়েছিলাম যেহেতু তিনি আমাকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, আমি তাকে চিনি-জানি, তাই এটা কী করে লিখেছেন! তিনি আমার প্রশ্নের জবাব দেননি।
জাফর ভাইর একুশে পদক, সরকারি চাকরি এসবের পর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। দূর থেকে দেখি আর ভাবি ভালো আছেন, এটাই ভালো। কারন তাঁর অনেক অবদান সংগ্রাম আছে। তাঁকে বলা হয় একটি জীবন্ত এনসাইক্লোডিয়া।
জাসদ কেনো সংসদীয় গণতন্ত্র ছেড়ে কর্নেল তাহেরের পিছনে গেলো এ প্রশ্নটি তুলেছেন জাফর ওয়াজেদ ভাই। এমন প্রশ্ন আওয়ামী লীগকেই বিব্রত করবে। কারন বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর সংসদীয় গণতন্ত্রের সেই চেহারাটি থাকলো কই?
এরজন্য বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের চর্চার কথা বললেও আওয়ামী লীগ কিন্তু বাকশালে ফেরত যায়নি। সেটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ রাজনৈতিক দল। তখন জিয়া সরকার যেখানে রাজনৈতিক দলের অনুমোদনের সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলা যাবে।
এরজন্যে তখন আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর নামও রাখা যায়নি। বাকশালের অনুমোদনের আবেদন করলে অনুমোদন পাওয়া যেতোনা এটিও সত্য। কিন্তু পরেওতো চেষ্টা করা হয়নি। আব্দুর রাজ্জাক বাকশাল নামের দলগঠন করেও সফল হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূলধারাটা তাই শেখ হাসিনারটাই। শেখ হাসিনা শুধু এখন আওয়ামী লীগের মূলধারা নন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিরও মূলধারা। সিপিবি সহ বাকশালের দলগুলো এই মূলধারা বিচ্ছিন্ন হয়ে উপকৃত হয়নি।
জাসদ কেনো হলো, জাসদ কেনো ব্যর্থ হলো, জাসদ কেনো ভুল ছিল, এসব আরেকদিন লিখবো। তবে জাসদেতো কেউ সোনার খনির লোভে যাননি। সেই নেতারা সেদিন জাসদে না গিয়ে আওয়ামী লীগে থাকলে পদে-সম্পদে কোথায় থাকতেন আজ?
আজকের অনেকে কোথায় থাকতেন? বঙ্গবন্ধুর পরিবারটির দূর্ভাগ্য এই পরিবারটির বদনাম শুধু হয়। মধু খায় অন্যরা। শেখ কামালেরতো কোন ব্যাংক একাউন্টই পাওয়া যায়নি। সম্পত্তি পাওয়া গেছে দুটি সংগঠন। আবাহনী আর সাংস্কৃতিক জোট।
শেখ মনির সম্পত্তি পাওয়া গেছে দুটি পত্রিকা আর বাংলারবানী ভবন। তখনকার ভাঙ্গনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে এখন আলোচনা কম হয়। তাঁর ভাই শেখ সেলিম এখনও নানাকিছুর নেপথ্যে। এখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রীও কলের পুতুল। পিছনে শেখ সেলিম!
এমন নানাকিছু বাদ রেখে মৃত প্রায় সংগঠন জাসদ নিয়ে টানাহেঁচড়ার কারন আল্লাহপাক আর আমাদের জাফর ওয়াজেদ ভাই জানেন। এতে কিন্তু আমাদের লাভ হয়না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-পক্ষ দ্বন্দ্বটা বড় বিদঘুটে হয়ে ওঠে।
জাসদ-তাহের কেউ সফল নয়, তাই তাদের কোন প্রশংসা নেই। শুধু নিন্দা আর নিন্দা! নিন্দার শেষ নেই! জাসদ-তাহেরতো এই মূহুর্তে কারও জন্যে বিপদজ্জনক প্রতিপক্ষও নয়। নিকট ভবিষ্যতে তেমন কিছু হবার সুযোগও নেই।
শেখ হাসিনা সবাইকে নিয়ে চলার পথ তৈরি করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-পক্ষ দ্বন্দ্ব কার ভালো করে কার মন্দ করে? ক্র্যাচের কর্নেলকে সম্মান দিতে না চান, সেটা যে কারও ব্যক্তিগত পছন্দ। এভাবে অপমানের ফলাফল হবে বিপদজ্জনক।