উৎসবমুখর পরিবেশে পেন্সিল অস্ট্রেলিয়ার ‘১৪২৮ বঙ্গাব্দ’ বরণ

উৎসবমুখর পরিবেশে পেন্সিল অস্ট্রেলিয়ার ‘১৪২৮ বঙ্গাব্দ’ বরণ

সালেহ আহমেদ জামী : পেন্সিল অস্ট্রেলিয়ার ‘১৪২৮ বঙ্গাব্দ’ বরণের আয়োজন ‘নব আনন্দে জাগো’ এক অনিন্দ্য সুন্দর উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো পেন্সিলরদের মুখরিত পদচারণায়। রকডেলের রেড রোজ ফাংশন সেন্টারে ১০ এপ্রিল ২০২১ শনিবার রাতে পেন্সিল অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে পেন্সিলররা নেচে-গেয়ে-কবিতা পাঠ করে বরণ করে নিলো নতুন বাংলা বর্ষকে। শুরুতেই কিছু শঙ্কা এবং প্রতিবন্ধকতা কাজ করছিল নববর্ষকে ঘিরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান নিয়ে কারণ সারা পৃথিবী আজ করোনা ভাইরাসের আক্রমণে স্থবির অবস্থায় আছে। টানা এক বছর মানুষ তাঁর স্বাভাবিক কার্যক্রম থেকে বিরত। এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে জনজীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছে করোনার নতুন তরঙ্গে। ইথারে ভেসে আসে দুঃসংবাদ। তারপরও জীবন থেমে থাকে না, জীবনকে বেঁধে রাখা যায় না। গৃহবন্দী সৃষ্টিশীল মানুষ তৈরী করে নিজের ও তাঁর চারপাশের মানুষদের আনন্দের জন্য গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প। ভিডিওতে ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমনই চলছিল আমাদের গত একটি বছর। পেন্সিলররা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল এই নাগপাশ থেকে। তাইতো তাঁদের উদ্যোগে প্রবাসী বাঙালিরা উপহার পেলো বাংলা সংস্কৃতির চাদরে মোড়া নির্মল একটি সন্ধ্যা। নানা রকম বিধিনিষেধ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে নিয়েই প্রথমে স্বল্প পরিসরে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা থাকলেও নিউ সাউথ ওয়েলস সরকারের নতুন নির্দেশানুক্রমে বেশ বড় কলবরেই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেছে। আগ্রহী পেন্সিলরদের অনেকেই কেবল স্থান সংকুলানের অভাবে সরাসরি মিলনায়তনে বসে এই উপভোগ করতে পারেননি এজন্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

জয় কবীর ও সাকিনা আকতারের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানের শুরু হয়। অনন্যসাধারণ উপস্থাপনায় ছিলেন  অনামিকা ধর,  জেরীন  আফরীন।

বাজানো হয় অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সকলে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে করোনা কালের মহামারিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য। এ সময় উপস্থিত পেন্সিলরদের অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। জিয়াউল ইসলাম তমাল সন্তুর, সুবির গুহর তবলার  মূর্ছনায় সকলকে খানিকক্ষণ বিমোহিত করে রাখার প্রাক্কালে পেন্সিলররা কেক কেটে ১৪২৮ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নেয়।

এর পরের পর্বে পেন্সিলের গুণী আবৃত্তিকারেরা শোনান স্বরচিত ও নির্বাচিত কবিতাসমূহ। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন মুনির বিশ্বাস, মালা ঘটক চক্রবর্তী এবং নির্মল চক্রবর্তী। আরিফুর রহমান, রিফাত মুর্শেদ, রুমানা চৌধুরী, শহিদুল আলম বাদল, মাসুদ পারভেজ, তাম্মী পারভেজ, ফয়জুন নাহার পলি আবৃত্তি করে শোনান পেন্সিলরদের। কবিতা আবৃত্তির পর তামিমা শাহরীন ও নিশাত সিদ্দিক নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন। রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ ঢালী, এনজেলিনা ঢালী ও মৌমিতা চৌধুরী। আধুনিক বাংলা গান করেন ডা নাজিয়া হক নিলুফার ইয়াসমিন ও শুভ্রা মুস্তারীন।

অতিথিদের অন ট্রে পরিবেশন করার ফাঁকে পেন্সিলরদের আলোকচিত্র গ্রহণের হিড়িক পড়ে সমগ্র হল জুড়ে।  খানিকক্ষণ বিরতির পর মঞ্চ আলোকিত করে সিডনির অন্যতম পুরাতন ও স্বনামধন্য একটি ব্যান্ডদল ‘লাল-সবুজ’। পেন্সিল অস্ট্রেলিয়া সম্মানিত তাঁদের পেয়ে। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা মন্ডলীর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনারা যাঁরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন তাঁরা উপভোগ করুন তাঁদের পরিবেশিত ‘সাগরের সৈকতে মিষ্টি কিছু হাওয়া এনে’, ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’, ‘এই মুখরিত জীবনে চলার পথে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপর পড়েছে’, ‘শ্রাবণের মেঘগুলি জড়ো হলো আকাশে’ গানগুলি। তবলায় রয়েছেন ‘বিজয় সাহা’ ইলেকট্রিক ড্রামে ‘নাহিদ আওলাদ হোসেন’, গিটারে ‘আত্তাবুর রহমান’, কিবোর্ডে ‘লুৎফা খালেদ’। গানগুলিতে কণ্ঠ দেন  সাব্বির বিন শহীদ, লুৎফা খালেদ, সৈয়দ হাসান উদ্দীন মাহদী, আত্তাবুর রহমান, সাব্বির বিন শহীদ।

নৃত্যের তালে তালে গ্রাম বাংলার লোকজ সংস্কৃতিকে পেন্সিলের মঞ্চ তুলে ধরেন অর্পিতা সোম চৌধুরীর দল। তাঁর পরিচালনায় ও নির্দেশনায় অর্পিতার সাথে নৃত্য পরিবেশন করবেন পড়শী, নীড়, সাফিনা, নীল, মেঘা, সারিকা, তিশা জেবিন, দেলোয়ারা খাতুন হেনা। বাংলার সংস্কৃতিতে নৃত্য মিশে আছে ওতপ্রোতভাবে একেবারে অনাদিকাল থেকে। উপস্থিত সকলেই কম বেশি নাচের তালে দুলে উঠেন অর্পিতার দলের সাথে।

একেবারে শেষ পর্বে গান শোনান সিডনির সংগীত অঙ্গনের সুপরিচিত সব শিল্পীবৃন্দ। আধুনিক বাংলা গান গেয়ে শোনান তমালিকা তামান্না জয়া, পলাশ বসাক, নাহিদ কামাল রূপসা, জিয়াউল ইসলাম তমাল শাহ আব্দুল করিমের ‘বন্দে মায়া লাগাইসে’ গানটি গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন। নিজামউদ্দিন উজ্জ্বল  সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী এনড্রু কিশোরের গাওয়া “আমার সারা দেহ খেও গো মাটি” গানটি উজ্জ্বলের তরফ থেকে শিল্পী এন্ড্রু কিশোর ও এই গানের মহান গীতিকার এবং সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি ছিল। যন্ত্রশিল্পীদের তবলায় সুবীর গুহ, অক্টোপ্যাডে তমাল, ঢোল বাজিয়েছেন বিজয়, লিড গিটারে প্রাঞ্জল, বেস গিটারে মাহাদী, হারমোনিয়ামে উজ্জ্বল  এবং কি-বোর্ড তথা সংগীত আয়োজনের নেতৃত্বে ছিলেন পলাশ বসাক। শচীন দেব বর্মণের জনপ্রিয় গান নিয়ে এই চৌকস দলটি একটি মেডলি পরিবেশন করেন এবং সবশেষে বর্ষবরণের গান “এসো হে বৈশাখ এসো এসো পরিবেশন করা হয় সম্মিলিত পেন্সিলরদের সাথে নিয়ে।

বর্ষবরণকে ঘিরে পেন্সিল অস্ট্রেলিয়ার এই আয়োজন সম্পন্ন হতো না পেন্সিলরদের অংশগ্রহণ ব্যতীত তাই আয়োজকরা সমস্ত কৃতিত্ব এর সদস্যদের বলেই মনে করে। নব আনন্দে জাগো শিরোনামে পেন্সিল অস্ট্রেলিয়া একটি নতুন ধারা স্থাপন করলো বলেই এই গৌরব সকলের।