প্রতিমা ভাঙ্গা শুরু হয়েছে মানে দুর্গা পূজা এসেছে

প্রতিমা ভাঙ্গা শুরু হয়েছে মানে দুর্গা পূজা এসেছে

ফজলুল বারী: কাশবন বা শারদীয় সংখ্যা দেশ’ দেখে নয়। দেশে প্রতিমা ভাঙ্গা শুরু হয়েছে মানে দুর্গা পূজা এসেছে! এমন ক্ষোভের স্ট্যাটাসে এখন ভাসছে নিউজ ফিড। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধু অনেকের টাইম লাইনে ঢু মারলে এমন ক্ষোভ-হতাশার প্রকাশ দেখা যাবে।  কারন সাম্প্রদায়িক শয়তানগুলোর বার্ষিক প্রতিমা ভাঙ্গার বিসমিল্লাহ হয়ে গেছে এরমধ্যে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ভাদিয়াখোলা সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরের নির্মানাধীন প্রতিমা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ভাঙ্গা প্রতিমার ছবি সহ দেয়া ক্ষোভ-হতাশার পোষ্টে একজন লিখেছেন, -‘এর মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের শুভ সূচনা। খোলা জায়গায়, জনবহুল মঠ-মন্দিরে পূজা না করাই ভালো। যারা প্রতিমা রক্ষা করতে পারবেন তারা পূজা করবেন। আর যারা রক্ষা করতে পারবেননা তারা পূজা কবেননা। যারা ভেঙ্গেছেন প্রথম স্থান অধিকার করার জন্যে অভিনন্দন জানানো হোক। এবং এর মাধ্যমে পূজা শুরু’!

ক্ষোভে হতাশায় অনেকে লিখেছেন ‘দেশে আইন করে পূজা বন্ধ করে দেয়া যায় না?’ অনেকে লিখছেন, যতবার তুমি ভাঙবে আমি আবার উঠে দাঁড়াবো দেবতা হয়ে’। একটা ঘটনা ঘটার পর এখন শাহবাগে ছোট আকারের হলেও প্রতিবাদ হয়। আগাম প্রতিরোধের সামাজিক আন্দোলন দকার।

আমাদের বাংলাদেশটা এক সময় এমন ছিল না। সামাজিক অর্থনৈতিক হিন্দু প্রভাবিত সমাজে এক সময় দুর্গা পূজা এই বাংলায় ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে একটি সামাজিক উৎসব ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরেও বাংলাদেশ ছিল তেমন একটি সম্প্রীতির দেশ। সেই বাংলা এখন প্রায় সাম্প্রদায়িক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। দুর্গা পূজাকে এখন শুধু হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব হিসাবে দেখা হয়। শুধু দেখা নয়, মসজিদে মসজিদে জুম্মার খুতবায়ও পূজার বিরুদ্ধে বলা হয়। ‘যতক্ষণ দাঁড়িয়ে পূজা দেখবে ততক্ষণ হাশরের দিন হিন্দুর সঙ্গে বিচার হবে’! রাজনৈতিক নেতারাও বিষয়টিকে সেভাবে দেখেন।

আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গা পূজার প্রতিমা দেখতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যেতেন। করোনা মহামারী শুরুর পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তিনি কথা বলেন ভার্চুয়ালি অথবা গণভবনে। একইভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের দল পূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি-জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ের বক্তৃতায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেছেন তারা যাতে নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবেন! বাংলাদেশে যে যখন ক্ষমতায় যান তখন তারা এভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যালঘু না ভাবার পরামর্শ দেন! অথচ বাংলাদেশে তারাতো সংখ্যালঘুই।সরকারি সব শুমারিতে দেখা যাচ্ছে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা শুধুই কমছে। প্রকাশ্যে বা নীরবে তারা দেশ ছাড়ছে। স্বৈরাচারী এরশাদ রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে ইসলামকে সংযোজন করেছিলেন সংবিধানে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ তখন এর প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা সেটি বহাল রাখে।

এই আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকতে অনেক কথা বলেছিল। ক্ষমতায় গিয়ে তারা বিএনপির চাইতে বেশি মুসলমান! এই আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সবকর্মী মননে চিন্তায় অসাম্প্রদায়িক নয়। মালাউন গালিটা এরাও দেয়। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বলা হয়, সে কাউয়া। অমুক দল থেকে অনুপ্রবেশকারী!  আবার পরিসংখ্যানগত সত্য হচ্ছে, দেশে বিএনপির চাইতে বেশি মসজিদ মাদ্রাসা আওয়ামী লীগ করেছে। সারাদেশজুড়ে মডেল মসজিদ করছে আওয়ামী লীগ। সে রকম মডেল মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডা গড়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। মাঝেমধ্যে তাদেরকে কিছু থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। এ নিয়ে শান্ত থাকো সুবোধ সংখ্যালঘুর দল।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অনেক চিত্রই আমুল পাল্টেছে। শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু প্রিয় প্রজন্ম দলটিও সাহস করে নিজেদের মনের কথাগুলো লিখছে ফেসবুকে। এরা তাদের বাবা-মা বা পূর্ব পুরুষের মতো চোখ বন্ধ করে আওয়ামী লীগ আর নৌকা মার্কা নয়। বিভিন্ন নির্বাচনের ভোটের খেলাতেও এটা দেখা যাচ্ছে। যদি ভোট দিতে পারে।

এখন প্রতিদিন সাদা চোখে ভালো মন্দের প্রতিক্রিয়া দিতে তারা দেরি করেননা হিন্দু প্রিয় প্রজন্ম। যেমন দেশে মুসলিম মৌলবাদের ব্যাপক বিস্তার নিয়ে তারা তীর্যক প্রতিক্রিয়া তারা দেন। যদিও মফঃস্বল এলাকায় সব প্রতিক্রিয়া দেয়া নিরাপদ নয়। হয়রানির শিকার হবার ভয়ে অনেকে প্রোফাইল লক করে রাখেন।

প্রতিবছর দুর্গা পূজার আগে প্রশাসনের পক্ষে নানান নিরাপত্তা প্রস্তুতির কথা বলা হয়। কিন্তু এসব প্রস্তুতির ভিতর গতবছর প্রতিমা ভাঙচুরের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। এসব ভাঙচুর ঠেকানোর সামাজিক আন্দোলন দরকার বাংলাদেশে। নাট্য ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মামুনুর রশীদ এদের নেতৃত্বে এমন একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ার এখনই সময়।