নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গত ১৬ই এপ্রিল ২০১৭, সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক এঁর উদ্যোগে, বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে অস্ট্রেলিয়ার বুকে সিডনির ইঙ্গেলবার্নে পালিত হল বৈশাখী উৎসব।
বাঙ্গালীদের প্রানের উৎসব বাঙলা নববর্ষ। পায়ে পায়ে পথ চলতে চলতে শেষ হয়ে এল ১৪২৩ বাঙলা বছর। চলে এল ১৪২৪। সিডনি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শামিল হয়েছেন বাঙ্গালীর প্রানের বৈশাখী উৎসবে। ভেদাভেদ ভুলে উত্সবের রঙে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছেন তারা।
লাল সাদা রঙের এক অপূর্ব সমাবেশ, দেখে মনে হয়েছে যেন সিডনির বুকে এক খণ্ড বাংলাদেশের নববর্ষের প্রানঢালা আয়োজন।
রবিন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দের কবিতা ও গান দিয়ে সাজানো ছিল কমিউনিটি হলের চার দেওয়াল।
অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রজন্মের শিশুদেরকে বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের তার সাথে পরিচিত করার জন্যই উৎসবের আয়োজন।
বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত “ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল” , শুরুতেই নিয়ে আসে ছোট বন্ধুদের পরিবেশনা। তারা একে একে চমৎকার কিছু দলীয় সঙ্গীত, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করে। স্কুলের শিশুকিশোরদের পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছে আবহ বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সাজ্জাদ আনাম চৌধুরী বাপ্পী , বাদ্যযন্ত্রে সাহায্য করেন বিজয় সাহা।
এর পরের পরিবেশনা ছিল সিডনির খুবই পরিচিত শিশুকিশোরদের দল “কিশালয় কচিকাঁচা র ” দলটি। বাহারি রঙ ও মন মাতানো পরিবেশনা অস্ট্রেলিয়া তে বেড়ে উঠা প্রজন্মের কাছে একটি উদ্দীপনা। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিদেশের মাটিতে ধরে রাখার জন্য শত প্রতিকূলতার মধ্যে এই দলটি সিডনি জুড়ে তাদের দলীয় সঙ্গীত, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশনা অব্যাহত রেখেছে গত এক দশক ধরে। কিশালয় কচিকাঁচার সার্বিক পরিচালনায় রোকসানা বেগম, বাদ্য যন্ত্রে সাহায্য করেন আনন্দ, মিজানুর রহমান, সাকিনা আক্তার এবং লোকমান হোসেন।
লিভারপুল সাটারডে কমিউনিটি বাংলা স্কুলের ছাত্ররা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিবেশন করে দলীয় সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, একক সংগীত , বাংলার সংস্কৃতি (পালকী , মঙ্গল প্রতীপ ,লুঙ্গী , গামছা, ধুতি , পান্জাবী , ফতুয়া, শাড়ী ,গ্রাম্য বধূ এবং গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য) নিয়ে নৃত্য ও বৃন্দা আবৃত্তি বাংলা হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা ছিল খুবই আকর্ষণীয় ও প্রশংসনীয় । হাই স্কুলের বাদ্য যন্ত্র এবং যান্ত্রিক সহায়তায় ছিলেন সীমা আহম্মেদ, সাকিনা আক্তার, লোকমান হোসেন। নৃত্য পরিচালনাযা ছিলেন নুসরাত হুদা, সংগীত পরিচালনার সীমা আহাম্মেদ। হাইস্কুলের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন রুমানা সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বড়দের পরিবেশনায় ,অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ সিডনির সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী সিরাজুস সালেকিন যিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় লোকগীতি শিল্পী আব্দুল লতিফের ছেলে তার দল নিয়ে আসেন। সাথে ছিলেন আরও দুই সনাম ধন্য শিল্পী হাবিব খান ও তৃপ্তি খান। দর্শকশ্রোতার তাদের গানগুলো মুদ্ধ হয়ে উপভোগ করেন ।
স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে একক আবৃত্তিতে পরিবেশনা করেন শাহীন শাহনেওয়াজ ও রুমানা সিদ্দিীকীর এবং সংগীত পরিবেশন করেন মাসুদ হোসেন মিথুন এবং সীমা আহমেদ। সবশেষে সমবেত কণ্ঠে “এসো হয়ে বৈশাখ… এসো এসো…” এবং জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাক্তন ফেডেরাল এম পি লরি ফারগাসন এবং এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অনুলাক চান্টিভং (এম পি)। দুই এম পি ই আয়োজকদের প্রশংসা করেন বাংলা হাইস্কুল, বাংলা ভাষা এবং সাংস্কৃতিক অংগনে অষ্ট্রেলিয়ার বেড়ে উঠা শিশুকিশোরদের নিয়ে কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য। সিডনী বাংগালী কমিউনিটি ইন্ক্ প্রতিবছর চারটা ইভেন্ট নিয়ে কাজ করে (পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস)। ক্যাম্পেলটাউন এলাকায় শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য সংগঠনটির স্থানীয় স্টেট এম পি আনুলক চান্তিভংগ এবং মেয়রের সাথে কাজ করে যাচ্ছে তা এমপি তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ও পেপার পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের পোষাক এবং ডিজাইনে ছিলেন বিলকিস খানম ও পালকি সজ্জাতে ছিলেন মুসফিকার রাহমান ইলা।খাবার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আশফাকুর রহমান , ইয়াকুব আলী ও ছুট বন্ধু ঈশান। সাউন্ড সিস্টেমে ছিলেন মাসুদ হোসেন মিথুন, সাজ্জাদ আনাম চৌধুরী বাপ্পী ও সৈয়দ হাসানউদ্দিন মাহাদী ।এছাড়াও মাল্টিমিডিয়াতে ছিল ঐহিক তারিক।
আনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন নাজমুল খান এবং পরিচালনায় থাকেন সেলিমা বেগম ।