বাংলাদেশে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ

বাংলাদেশে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসান

বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসানকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মোবাশ্বার হাসান তাঁর পরিচিতজনদের কাছে সিজার নামে পরিচিত। গত এক বছর যাবত বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্স এন্ড সোশিওলজি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করছিলেন মোবাশ্বার হাসান।

২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন। সে সময় তিনি বছর খানেক ঢাকায় সাংবাদিকতা করেছেন।

এরপর তিনি ব্রিটেনের ডান্ডি ইউনির্ভাসিটি থেকে রাজনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কয়েক বছর ব্রিটেনে অবস্থানের পর মি: হাসান ঢাকায় ফিরে আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামে যোগদান করেন।

বছর দেড়েক সেখানে কাজ করার পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান এবং সেখানে গ্রিফিথ ইউনির্ভাসিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামের প্রভাব কতটা ভূমিকা রাখছে সেটি ছিল তাঁর পিএইচডি থিসিসের বিষয়বস্তু।

অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে মি: হাসান ঢাকার বেসরকারি ইউল্যাব ইউনিভার্সিটিতে মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। প্রায় দুই বছর সেখানে কাজ করার পর তিনি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

ইসলাম, রাজনীতি এবং জঙ্গিবাদ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং জার্নালে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লি-ভিত্তিক একটি জার্নালে তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

বিশ্বায়নের ছায়ায় বাংলাদেশের ভেতরে কিভাবে রাজনৈতিক ইসলাম এবং উগ্রবাদী সহিংসতা ছড়াচ্ছে সে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তিনি সর্বশেষ লেখায়।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মি: হাসান। সেজন্য বাসার সামনে ক্লোস সার্কিট ক্যামেরাও স্থাপন করেছিলেন তিনি।

কিছুদিন আগে তাঁর বাসায় একজন অপরিচিত ব্যক্তি এসে তাঁর খোঁজ করেছিলেন বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

মোবাশ্বার হাসানের ফেসবুক পাতায় ৩১শে অক্টোবরের এক পোস্টে দেখা যাচ্ছে তিনি লিখেছেন এক-দুই বছর ধরে তিনি বেনামী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিরক্তিকর বার্তা পেয়ে আসছেন।

মি: হাসান এমন এক সময়ে নিখোঁজ হলেন যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।এদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। এদের কেউ ফিরে এসেছেন এবং অনেকের কোন খোঁজ মেলেনি। কয়েকমাস আগে লেখক ফরহাদ মযহার ভোরে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর রাতে তাঁর সন্ধান মেলে।

মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ হবার পর খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাঁর বাবা মোতাহার হোসেন।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন তাঁর বাবা পুলিশকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাতটায় মি. হাসান তাঁর কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে যান।

সেখানে ক্লাস শেষ করার পর দুপুরে আইডিবি ভবনে একটা মিটিং ছিল বলে জানা গেছে।

মি. হাসানের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন গতকাল দুপুর তিনটায় একবার এবং ৪টায় আরেকবার ফোন করেন তিনি।

এরপর থেকেই তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

তাঁর বাবা মোতাহার হোসেন বলেন, তাঁরা নিজেরাও ধারণা করতে পারছেন না বিষয়টা কী হচ্ছে। এর বেশি কিছু তিনি বলেন নি।

পুলিশ বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। (বিবিসি বাংলা)