রাত ১ টা। সিডনীর গভীর রাত। শাওন-সমীরদের নিউটাউনের বাসা থেকে কেম্পসির বাসায় ফিরছি। মনের আনন্দে ছন্দার সাথে গল্প করছি আর সদ্য কেনা দশ বছরের পুরনো মাজদা চালাচ্ছি। খেয়াল করা হয়নি যে পিছনের গাড়িটা পাগলের মতো ওভারটেক করতে চাচ্ছে । নিউটাউনের এই রাস্তায় দুটো লেন। তবে রাতের বেলায় বাম দিকের লেনটাতে গাড়ী পার্ক করা থাকে যার ফলে একটা লেনই ব্যবহার উপযোগী। এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণত পাগল কিংবা মাতাল ড্রাইভারদের আগে চলে যাবার সুযোগ করে দেই। আজকে খেয়াল করে দেয়া হচ্ছিলনা কারন গল্পের মধ্যে ছিলাম। অর্ণব বোধহয় ঘুমাচ্ছে। দুই বছর বয়স। কথা বলতে শিখছে। দুই তিনটা শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করে। টেলিভিশন দাও, এই রকমের বাক্য আরকি। কথায় পটু না হলেও হাত পা চলে যতোক্ষণ জেগে থাকে। ভিসিআর চলছেনা ব্যাপার কি। ভিসিআর এর কভার খুলে দেখি বাসার যতো চামচ কাটাচামচ সবই ভিসিআর এর মধ্যে। নতুন সংসার একটা টেলিভিশন কিনেছি। একটা টেলিভিশন স্ট্যান্ড কিনব। ছন্দা বলে সুন্দর দেখে কিনো, আর আমি খুঁজি উঁচু দেখে। শেষমেষ সারে চার ফুট উঁচু এক টেলিভিশন স্ট্যান্ড কিনলাম। আমার চেহারা এবং রুচি দুটোই যে খারাপ তা আবারও প্রমান করলাম।
যা বলছিলাম। পিছনের গাড়িটাকে ওভারটেক করতে না দিয়ে যে ভুলটা করেছি ট্রাফিক লাইটে গাড়ী থামিয়ে তা বুঝতে পারলাম। ট্রাফিক লাইটের দুটো লেন ফাঁকা পেয়ে পিছনের গাড়িটা পাশে এসে দাড়ালো। দুইটা সাদা চামড়ার ২০-২৫ বছরের যুবক প্রান খুলে গালি দেয়া শুরু করলো। Bloody f**king Indian go back to India. গালি শুনে প্রথমে ভালোই লাগলো। যাক গালিটা ইন্ডিয়ানদের দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে নেই। সহপাঠী জুয়েল কানাডাতে থাকে। আমাদের মধ্যে প্রথম বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পায়। যাবার আগে আমাকে একটা উপদেশ দিয়েছিলো। এখন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। দুই নম্বর কাজ করলে বলতে হবে ইন্ডিয়ান, আর ভালো কাজ করলে বাংলাদেশি।
প্রথম গালিটা শুনে ভালো লাগলেও পরের গালি শুনে বায়ু চড়ে যায়। মা বেচারী কখনও অস্ট্রেলিয়া আসেন নাই। বদমায়েশ গুলো দেখি তাঁকেও নিয়ে এসেছে। আমাদের বাঙ্গালীদের একটা বিশেষ গুন আছে। হঠাৎ বায়ু চড়ে যায়। কি যেন মাথায় উঠে যায়। আমারও সেই অবস্থা। চিৎকার করে দুটো ইংরেজি গালি দিয়েই দেখি স্টক শেষ। আর কিছু মনে পরছেনা। ম্যাট্রিক পরীক্ষার গরুর রচনার মতো। গরুকে নদীতে নামালাম উঠাতে পারছিনা। স্টক শেষ। মুখস্ত করেছিলাম ভুলে গেছি। ইংরেজি গালিরও স্টক শেষ। কিন্তু বায়ু চড়েই আছে নামাতে পারছিনা। আর ঐ সাদা গুলো মাকে বাদ দিয়ে এখন আমাকে নিয়েই পরেছে। হঠাৎ দেখি মাথা খুলে গেলো। জার্নি বাই বোট রচনা মনে পড়ে গেলো। গরুকে নদী থেকে উঠাবার দরকার নাই, নদীর বর্ণনা দিয়ে শেষ করি।
ছোট বেলাটা পুরান ঢাকার লালবাগে কেটেছে। অনেক শিক্ষার সাথে যে গালি শিক্ষাটাও আছে তা এক প্রকার ভুলতে বসেছিলাম। শুরু করে দিলাম। চিৎকার করে ওর মাকে দিয়েই শুরু করলাম। এক দমে পঞ্চাশটা। দম নিয়ে দেখি শরীরে শক্তি ফিরে আসছে। দ্বিগুণ উৎসাহে আবার শুরু করলাম। দ্বিতীয় বার দম ছেড়ে দেখি বদমায়েশ গুলো চুপসে গেছে। ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় ওদেরই স্টক শেষ। ঢাকাইয়া গালি শুনে ভাষাহারা। তৃতীয় বার শুরু করব কিনা ভাবছি। এর মধ্যে কখন যে ট্রাফিক সিগন্যালের লাল বাতি উঠে সবুজ বাতি জ্বলছে, তা খেয়াল নেই। হঠাৎ দেখি আমার দুই বছর বয়সের অর্ণব ক্ষেপে গেছে। বাটন টিপে জানালা খুলে হুংকার দিয়ে উঠলো, মাঙ্গরের পোলা। আমিতো থ। আবার স্টক শেষ। সাদা গুলো ট্রাফিক লাইট পার হয়ে সোজা না গিয়ে বাঁ দিকের গলি দিয়ে পালিয়ে গেলো।
(জাফিরুল হোসাইন )