আজ দুপুরে সিডনির ব্যাংকসটাউন হিমালয় এম্পোরিয়ামে ইউনাইটেড বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে বিংগো বাংলাদেশ বিজয় দিবস উৎসব পালিত হয়। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে বিশেষ সন্মাননা প্রদান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ওমেন কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সাজেদা আখতার সানজিদা ফুলের তোড়া দেন ইউনাইটেড বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রিত অতিথিদের। অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
সংক্ষিপ্তভাবে বক্তৃতা করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ডঃ আয়াজ চৌধুরী। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী ব্যাপক মানুষের প্রাণহানি ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং এর পিছনে অন্যতম ভূমিকা রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা।তিনি আরো বলেন তাদের অবদানের কথা কোনোদিন ভুলবার নয়। ”
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিডনির কনসাল জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলম। তিনি বলেন,”পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নাম একটি দেশ এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রাম যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছিলো। আর এই মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের আত্মত্যাগ ছিলো তারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ”
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং নিউ সাউথ ওয়েলস লিবারেল পার্টির সভাপতি ফিলিপ রাডক বলেন, ” আমি বাংলাদেশী না কিন্তু আমি বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ানদের বন্ধু। আমি বাংলাদেশের লাল সবুজের ইতিহাস জানি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে ছিল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াই প্রথম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে নতুন দেশটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। ”
স্টেট এম পি মিস ওয়েন্ডি লিন্ডসি বলেন,” আমার ফেইসবুকে অনেক বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান বন্ধু আছে এবং আমি দেখি লাল সবুজের রঙের সমারোহ প্রতিটি ১৬ই ডিসেম্বরে যা দেখে আমি মুগ্ধ। ”
কার্ল সালেহ প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র,ক্যান্টাবুরি কাউন্সিল বলেন,”আমি লেবার পার্টির নেতা হিসেবে এইখানে আসিনি আমি এসেছি আমার প্রিয় বন্ধু বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের বিজয় দিবস উৎসব উৎযাপন করতে। আমি বার বার দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কতটা একাগ্রতা। আমি এই উৎসবে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ”
টেলেঅস(TELEAUS) এর প্রধান কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তরুণদের দেশের সেবায় এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করেন কনসাল জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলম। বয়স, কভিড-১৯ এবং দূরত্বের কারণে কিছু মুক্তিযোদ্ধা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি কিন্তু তাদের । সম্মাননা প্রদানের পরপরই উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যুদ্ধের কিছু স্মৃতি তুলে ধরেন তাদের স্মৃতিমাখা সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের।
মুক্তিযুদ্ধাদের মধ্যে যারা সম্মাননা পান তাদের তালিকা :
১.মোঃ মিজানুর রহমান তরুণ
২. আবুল হেলাল উদ্দিন
৩. শাহ মোঃ এনায়েতুর রহিম
৪. আপেল মাহমুদ ( কভিড-১৯ থেকে নিরাপদ রাখতে অনুপস্থিত ছিলেন )
৫.ড. হাবিবুর রহমান বিশ্বাস
৬.হুমায়ুন কবির খান ( অনুপস্থিত )
৭.ড. মোঃ আব্দুর রাশিদ ( এর প্রতিনিধিত্ত্ব করেন উনার ছেলে )
৮. ড. আমিনুল হক ফারাইজি
৯. এম রেজাউর রহমান
১০.মোঃ আব্দুল লতিফ
১১. কামরুল আহসান খান
১২. মোঃ মখদুমই আজান মাশরাফি (পার্থে অবস্থানের কারণে সশরীরে আসতে পাঁরেননি )
১৩. ড. মো শাহাদাত খান ( মেলবোর্নে অবস্থানের কারণে সশরীরে আসতে পাঁরেননি )
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ নিয়ে গান পরিবেশন করেন তামিমা শাহরীন ও জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি। কবিতা আবৃত্তি করেন ফায়জুন নাহার পলি, হাবিবুর রহমান ও মাসুদ পারভেজ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমেরিটাস প্রফেসর ডক্টর রফিকুল ইসলাম সহ সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ এবং সাংষ্কৃতিক শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির সহ সভাপতি ও প্রাক্তন কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহ জামান টিটু, উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ দেন এবং তিনি বলেন ,” ইউনাইটেড বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ অস্ট্রেলিয়া আগামী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ২৭ সে মার্চ অস্ট্রেলিয়ার সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন করার আশ্বাস দেন। ”
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন লিটন বাউল।