অনলাইন ডেস্ক: ১২ নভেম্বর ২০১৫
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্থপতি লুই কানের নকশায় শেরেবাংলা নগর এলাকায় কবরস্থানের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি—এই যুক্তিতে জিয়াউর রহমানসহ সেখানকার আরও সাতটি কবর সরানোর পক্ষে মত দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। খবর প্রথম আলোর।
বাকি সাতটি কবর সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানের।
এই আটটি কবর ছাড়া শেরেবাংলা নগরে আছে লুই কানের নকশাবহির্ভূত আরও সাতটি স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে বড় স্থাপনা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি), স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন। এর বাইরে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরের চারদিকে থাকা চারটি প্রবেশপথের শুরু বা শেষ প্রান্তে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, সম্মেলন কেন্দ্র ও মসজিদসহ চারটি স্থাপনা।|
সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ মারা গেলে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সংসদ ভবনের ‘জাতীয় কবরস্থানে’ দাফন করার জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু তাতে সম্মতি দেওয়া হয়নি। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবন সীমানার পূর্ব প্রান্তে আসাদগেটের উল্টো দিকের পেট্রলপাম্পটি তুলে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তখনকার মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ভাইকে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
মূল নকশা অনুযায়ী, সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের পাশাপাশি নতুন সচিবালয়ও শেরেবাংলা নগরে হওয়ার কথা। কিন্তু বিএনপি সরকার সেখানকার ১০ একর জমিতে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করে, যা পরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নামে নামকরণ করা হয়। এখন সরকার আবার সেখানে সচিবালয় স্থানান্তর করতে চাইলেও লুই কানের মূল নকশা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ব্যাপারে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, কবর তো বনানী, আজিমপুর বা মিরপুর কবরস্থানে হওয়ার কথা। কবর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় হবে কেন? তা ছাড়া, লুই কানের নকশার কোথাও শেরেবাংলা নগরে কবরস্থানের জন্য জায়গা নির্ধারিত ছিল না।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি চট্টগ্রামের জন্য সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমি এখন মন্ত্রী। তাই বলে আমি মারা গেলে আমাকে কি এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে দাফন করতে হবে?’
এক প্রশ্নের জবাবে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, সংসদ এলাকা থেকে কবর ছাড়াও নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা সরানো উচিত। জাতীয় প্রয়োজনে মসজিদ-মাদ্রাসাও তো সরানো হয়।’
তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, লুই কানের মূল নকশা আনা বা কবরগুলো সরিয়ে দেওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জিয়াউর রহমানের কবর সরানো। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন সেখানে জিয়ার সমাধি করা হয়েছিল, কে করেছে বা কেন করেছে—এত দিন পর সেই প্রশ্ন অবাস্তব ও অবান্তর। এ দেশের মানুষ জানে, সেখানে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করা একজন জাতীয় নেতার সমাধি আছে। ওটা সরালে গর্হিত কাজ হবে, সংঘাত ও প্রতিহিংসার নতুন বীজ বপন করা হবে।
শেরেবাংলা নগরে নকশাবহির্ভূত স্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার লুই কানের মূল নকশা হাতে পেতে চায়, যা রয়েছে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার আর্কাইভসে। ওই নকশার একটি অনুলিপি সরকারের কাছে আছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, মূল নকশা সংগ্রহের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৪ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে।
রাজনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, সংসদ ভবনের সীমানায় জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ আনা হয়েছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ও উদ্দেশ্যে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তাঁকে হত্যার পর প্রথমে দাফন করা হয়েছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। পরে সেখান থেকে তাঁর দেহাবশেষ তুলে এনে ২ জুন চন্দ্রিমা উদ্যানে কবরস্থ করা হয়। ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরকে কেন্দ্র করে পাঁচ বিঘা জমিতে সমাধি কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৩ সালে কাজ শুরু হয়, চলে ২০০৭ পর্যন্ত।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক প্রকৌশলী জানান, ক্রিসেন্ট লেকের ওপরের ঝুলন্ত সেতু ও মসজিদ ছাড়া কোনো স্থাপনা সেই অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে না। জিয়ার কবরকেন্দ্রিক প্রায় সমাপ্ত বা অসমাপ্ত কাজগুলো সরকার আর এগিয়ে নিতে চায় না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় জিয়াউর রহমানের কবর চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছরের ৭ জুলাই একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ ভবনের ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি লুই কানের নকশা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কবরগুলো যদি সরানোর দরকার হয়, তাহলে সরকার তা করবে। এরপর এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে ১৪ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
(সুত্রঃ লেটেস্টবিডিনিউজ.কম)