অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৪০তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার। ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও ভুবনমোহিনী দেবীর পাঁচ ভাই সন্তানের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তার বেশিরভাগ রচনায় জীবনধারণ, ট্রাজেডি, গ্রামের মানুষের সংগ্রাম এবং তার সমসাময়িক বাংলার মানুষের সামাজিক আচার ফুটে উঠেছে। উইকিপিডিয়ার মতে তিনি সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয়, সবচেয়ে বেশি অনুদিত এবং তার লেখা সবচেয়ে বেশি নকল করে লেখা হয়েছে। দেবদাস, পরিণীতা সহ তার অনেক উপন্যাস ও গল্পের উপর নির্ভর করে বাংলা ও হিন্দিতে সিনেমা-নাটক নির্মিত হয়েছে।
শরৎচন্দ্রের বাল্যকাল ও কৈশোর কাটে ভাগলপুর মাতুলালয়ে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নবম শ্রেণী পর্যন্ত। ভারতবর্ষের নানা জায়গায় ঘুরেছেন। শরৎচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস বড়দিদি (১৯০৭) তাকে তাৎক্ষণিক খ্যাতি এনে দেয়। তার অন্যান্য প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম পরিণীতা, বিরাজ বৌ, পণ্ডিত মশাই, পল্লী সমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, দেবদাস, চরিত্রহীন, শ্রীকান্ত, বামুনের মেয়ে, দেনাপাওনা, পথের দাবি, শেষপ্রশ্ন, বিপ্রদাস। এর মধ্যে চার খণ্ডে রচিত শ্রীকান্ত তার শ্রেষ্ঠ রচনা। এই উপন্যাসের ইন্দ্রনাথকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কিশোর চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে রামের সুমতি, বিন্দুর ছেলে, মেজদিদি, ছবি ইত্যাদি তার সুখপাঠ্য বড়গল্প। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কালের যাত্রা নাটকটি এই মহান কথাশিল্পীকে উৎসর্গ করেছিলেন।
শুধু তাই নয় তার চিত্রশিল্পেও সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। বার্মায় থাকার সময়ে আঁকা তৈলচিত্র ‘মহাশ্বেতা দেবী’ তন্মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত। তিনি সামাজিক অবিচার, কুসংস্কার ও ধর্মের নামে অনৈতিক সংস্কারের বিরোধী ছিলেন। তার রাজনৈতিক উপন্যাস পথের দাবি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত। তারুণ্যের বিদ্রোহ এবং স্বদেশ ও সাহিত্য তার প্রবন্ধ গ্রন্থ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডিলিট (১৯৩৬) উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার পার্ক নার্সিং হোমে তিনি মারা যান। (সূত্র: ইত্তেফাক)