বাংলাদেশের ৫৮টি ব্যাংকের  কারোরই ক্রেডিট রেটিং নেই

বাংলাদেশের ৫৮টি ব্যাংকের  কারোরই ক্রেডিট রেটিং নেই

কাউসার খান:অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে শুরু হয়েছে বিশ্ব আর্থিক সম্মেলন ‘সিবোস ২০১৮’। সিডনির আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ২২ অক্টোবর শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সম্মেলন হল বৈশ্বিক অর্থ বাজারের সংগেবিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মেলবন্ধন । প্রতিবছর গোটা বিশ্ব থেকে হাজার ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যোগ দেন এই সম্মেলনে। এ বছর প্রায় ৮ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিনিধি, সিদ্ধান্ত প্রণেতা ও বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণকরেছেন এ সম্মেলনে। সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনি হয় বিভিন্ন আর্থিক উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও ধারনার। এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান বিভিন বিষয়ের প্রদর্শনি করেছে। গুগল, অরাকল, মাইক্রোসফটের এর মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানও যোগ দিয়েছে এ সম্মেলনে। সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্যদের সংগে  মিউচুয়াল  ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড যোগ দিয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাপরিচালক আনিস এ খান এখন সিডনিতে অবস্থান করছেন। তিনি পঞ্চমবারের মতো এ সম্মেলনে যোগদান করলেন। ৩৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞ আনিস এ খান বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুতপূর্ণ পদে কাজ করেছেন।অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের নানা অগ্রযাত্রায়। গতকাল সিডনির এক হোটেলে বসে সিবোস সম্মেলন ও বাংলাদেশের ব্যংকিং বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রায় ৫৮টি ব্যাংকের  কারোরই ক্রেডিট রেটিং নেই

আশির দশকে যখন বাংলাদেশে বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করে, তখন বিভিন্ন সময়ে সেসব কার্যক্রমের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সংগে কাজ করেছি। সে সুবাদে বহুবারঅস্ট্রেলিয়ায় আসা হয়েছে। আবার কখনো প্রশিক্ষণ নিতে আসা হতো। এর থেকেই আমার সঙ্গে  অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটা যোগসূত্র তৈরি হয়েছে।’ বাংলাদেশের ব্যংকিং খাতে বিদেশি ব্যাংকগুলোর যোগদান চোখে পড়ার মতো নয়। কারণব্যাংকের সাথে ব্যাংকের যে সম্পর্ক হয় সেটা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হতে গেলে ব্যাংক ক্রেডিট রেটিং প্রয়োজন। এই রেটিংস আন্তর্জাতিক ক্রেডিট সংস্থাগুলো দিয়ে থাকে। এই রেটিং এর ওপর নির্ভর করে সাধারণ ভাষায় এক ব্যাংক আরেকব্যাংককে কটটুকু বিশ্বাস করবে। তবে বাংলাদেশে এই ধারণাটি সবে মাত্র হামাগুড়ি দিতে শুরু করেছে। হাতে গোনা কয়েকটা ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় ৫৮টি ব্যাংকের কারোরই ক্রেডিট রেটিং নেই। সেজন্যই বাংলাদেশের ব্যাংকিং এআন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর তেমন কোনো সম্পর্ক দেখা যায় না। যাদের আছে তারা ব্যক্তিগতভাবে সেই সম্পর্ক তৈরি করেছে।’

সম্মেলনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ধারণা পাওয়া

‘বিভিন্ন বৈদেশিক ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে না গিয়ে সিবোস সম্মেলনে আসলে রথ দেখা আর কলা বেচার মতো দুই কাজ একসাথে  হয়ে যায়। একদিকে, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুননতুন ধারণা যেমন পাওয়া যায়, তেমনই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে এক ছাঁদের নিচে আলোচনাও করা যায়। এর সুফলটা আমরা নিজেরাই পেয়েছি। গত পাঁচ বছরে এই সম্মেলনের সুবাদে বহু আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সাথে আমাদের সুদৃঢ়সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।’

এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগেও প্রবাসীদের রেমিটেন্স দেশে পাঠাতে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। গুণতে হয় বাড়তি অর্থ কেন ? 

‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তবে গোটা বিশ্বে এর সংখ্যা একেবারেই কম। অস্ট্রেলিয়াতেও নেই। কারণ ভিন দেশে ব্যাংকিং  সেবা চালু করতে যে পুঁজি আর সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন, বাংলাদেশেরবেশিরভাগ ব্যাংকেরই সেটা দূর্বল। তবে অনেক ব্যাংকই রেমিটেন্স আদান প্রদানের আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোর সাথে এক হয়ে কাজ করছে।’

বাংলাদেশের ব্যাংকিং এর রূপ বদলাচ্ছে দ্রুত 

‘বাংলাদেশে এখন অর্থ লেনদেনের বিষয়টা সবার হাতে পৌঁছে গেছে। আমরা গ্রামগঞ্জে এর সুবিধা প্রসারে কাজ করছি। ব্যাংককে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে মনোযোগী হয়ে উঠেছে প্রায় সকলেই। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে অর্থ লেনদেনেরবিষয়টিকে সহজতর করতে এজেন্ট ব্যাংকিং এর সুবিধা ও সহজলভ্যতা বাড়ানো হচ্ছে। সকল উদ্যোগগুলোই ফলপ্রসূ হচ্ছে।’