অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ তালিকায় ‘বাংলাদেশসম্পৃক্ত’ ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ তালিকায় ‘বাংলাদেশসম্পৃক্ত’ ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

[spacer height=”0px”]বাংলাদেশি নয়, তবু বাংলাদেশের দুর্নাম

অস্ট্রেলিয়া সরকারের নিষিদ্ধ তালিকায় ‘বাংলাদেশসম্পর্কিত’ ১৯টি নাম রয়েছে; তারা কেউ বাংলাদেশের নয়, তবু বাংলাদেশে বা বাংলাদেশকে ঘিরে তৎপরতার অভিযোগে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নামের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম এসেছে। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদাসহ (একিউআইএস) বিভিন্ন বৈশ্বিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর অন্যতম ঠিকানা হিসেবেও বাংলাদেশকে দেখানো হয়েছে ওই তালিকায়।

নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা ছয় হাজার ৫২ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর ওপর অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তালিকায় অনেক নাম এসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গৃহীত প্রস্তাব থেকে। সেগুলো বাস্তবায়ন করা জাতিসংঘের সদস্য সব দেশের জন্যই আবশ্যক। আবার  অস্ট্রেলিয়া সরকার নিজে থেকেও অনেকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল রিলিফ ফাউন্ডেশন (জিআরএফ) জঙ্গি অর্থায়নে অভিযুক্ত হয়ে ২০০১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ওই ফাউন্ডেশনের বৈদেশিক তৎপরতার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ছাড়াও কয়েক দেশের নাম রয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আইএসআইএল (দায়েশ), আল-কায়েদা এবং সহযোগী গোষ্ঠীগুলো বিষয়ক কমিটি জিআরএফকে তালিকাভুক্ত করেছে।

আল-কায়েদাবিষয়ক জাতিসংঘ কমিটির তালিকাভুক্ত গোষ্ঠী আল বির আল দাওয়ালিয়ার (বেনেভোলেন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন) মূল ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় হলেও সুদান, বাংলাদেশ, গাজা উপত্যকা ও ইয়েমেনে এর উপস্থিতির তথ্য রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার তালিকায়। আল-কায়েদাপ্রধান ওসামা বিন লাদেন সংশ্লিষ্ট এই গোষ্ঠীকে জাতিসংঘ ২০০২ সালে চিহ্নিত করে। বেনেভোলেন্স ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (বিআইএফ) এবং বিআইএফ-ইউএসএ হিসেবেও ওই গোষ্ঠী নিষিদ্ধ তালিকায় আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ভিত্তিক মেঝদৌনারোডনিজ ব্লাগোটভোরিটেলনিল ফন্ডেরও সুদান, বাংলাদেশ, গাজা উপত্যকা ও ইয়েমেনে তৎপরতা ছিল বলে অস্ট্রেলিয়ার তালিকায় তথ্য রয়েছে। জাতিসংঘ কমিটির তালিকায় এ প্রতিষ্ঠানটির নাম এসেছে ২০০২, ২০০৩, ২০১১ ও ২০১২ সালে।

জাতিসংঘ কমিটির তালিকাভুক্তির সময় ‘আল-হারমাইন : বাংলাদেশ শাখা’র অফিস ছিল ঢাকার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে। সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি দাতব্য সংস্থা আল-হারমাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ শাখার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কমিটি ২০০৪ সালেই জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার পক্ষে অর্থায়ন ও তৎপরতা চালানোর অভিযোগ তোলে। জাতিসংঘ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ‘আল-হারমাইন : বাংলাদেশ শাখা’কে অস্ট্রেলিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের সম্ভলে জন্ম নেওয়া তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার, আল-কায়েদা সমর্থক ও ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর একিউআইএস ঘোষিত নেতা জনৈক অসীম ওমর ওরফে সানাউল হক ওরফে অসীম ওমের ওরফে মাওলানা অসীম ওমরকে নিষিদ্ধ করতে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়া। অসীম ওমরের ঠিকানা হিসেবে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তান।

নিষিদ্ধ ঘোষিত আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন একিউআইএস ও জামায়াত আল কাদিয়াত আল-জিহাদ ফি সিবাহ আল-কুর্রাহ আল-হিন্দিয়াহর ঠিকানা হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার তালিকায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তান লেখা রয়েছে।

ঢাকায় অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের তথ্যানুযায়ী, সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় জ্ঞান ও দক্ষতা জোরদারে গত পাঁচ বছরে দুই শতাধিক বাংলাদেশি কর্মকর্তাকে অস্ট্রেলিয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছে অস্ট্রেলিয়া। ওই কর্মকর্তারা অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, তদন্ত, মোকাবেলা ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

সম্প্রতি ঢাকায় অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনে এক অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবলেট বলেন, ‘সহিংস উগ্রবাদ এমন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যার প্রভাব আমাদের সবার ওপর পড়ে। বাংলাদেশে সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে পেরে অস্ট্রেলিয়া আনন্দিত।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ঠিকানা হিসেবে বাংলাদেশের নাম আসাটা এ দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। সন্ত্রাস দমনে বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ সক্রিয় রয়েছে। বর্তমান সরকার এ দেশের ভূখণ্ড কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হতে না দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না তা বিশ্ব সম্প্রদায়ও স্বীকার করছে। (সূত্রঃ কালের কণ্ঠ )