জানি না, প্রধান বিচারপতি কেন বলেন আইনের শাসন নেই: শেখ হাসিনা

জানি না, প্রধান বিচারপতি কেন বলেন আইনের শাসন নেই: শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনাশেখ হাসিনা

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন সম্পর্কে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জানি না, আমাদের প্রধান বিচারপতি কেন বলেন আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই তো ইচ্ছামতো সময় দিয়েই যাচ্ছেন। রিট নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের দুর্নীতির মামলার শুনানিতে বার বার সময় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘একটি মামলায় ১৪০ দিন সময় চাওয়া হয় এবং তা দেওয়া হয়। একই মামলায় যদি ৪০/৫০ বার রিট হয় এবং তা নিষ্পন্ন হয়—তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই কিভাবে? বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য এই দৃষ্টান্তই তো যথেষ্ট। স্বাধীনতা না থাকলে তো তারা এটা দিতে পারতেন না। আমাদের যদি ওই ধরনের কোনও মানসিকতা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই বিচার বিভাগ তা দিতে পারতেন না। আর যারা সময় পাচ্ছে তারাই তাল মিলিয়ে বলে আইনের শাসন নেই।’

আইনের শাসন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন আছে বলেই আমরা জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারছি। আর জঙ্গিদের যদি ধরা হয় বা  গোলাগুলিতে কোনও জঙ্গি মারা যায় তাহলে সেটাকে তো মানবাধিকার লঙ্ঘন বলা যায় না। এই একটা মানুষের জন্য তো শত শত মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হতো বা পঙ্গু হতে হতো। জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হতো।

জঙ্গিদের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ থাকার অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিদের ধরলে বা নিজেদের বোমায় জঙ্গিরা সুইসাইড করলেই আমাদের বিএনপি নেত্রীর প্রাণ কাঁদে, আরও অনেকের প্রাণ কাঁদে। কিন্তু কেন? যোগসূত্রটা কী ? এদের সঙ্গে কোনও গোপন যোগাযোগের সূত্র তাদের আছে কিনা?’ এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস বিএনপির আমলেই শুরু হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় হাজিরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতিমের টাকা মেরে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য মামলা হয়েছে। এখন সেই মামলায় কোর্টে যাওয়াই প্রায় বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। বুকে সাহস থাকলে দুর্নীতির মামলা মোকাবিলা করতে ভয় কিসের? ১৪০ দিন মামলায় সময় নিয়েছে। সেই সঙ্গে একের পর রিট। শুধু হাইকোর্টেই একটি মামলায় ৫০ বার রিট করেছে। ভয়টা কীসের? এতিমের টাকাটা দিয়ে দিলেও তো মামলাটা চলতো না। কিন্তু তারা টাকা ছাড়বে না। এই যাদের মানসিকতা তারা দেশকে কী দেবে! দেশের কী উন্নয়ন করবে?

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে এদেশে বাক স্বাধীনতা নেই। যারা রিপোর্টটা করেছে তাদের বলবো, এই যে টেলিভিশনগুলিতে বসে বসে দিনরাত আমাদের বিরুদ্ধে সমানে কথা বলা হচ্ছে। টকশো, আলোচনা-একবারে স্বাধীন মতো। কেউ কি তাদের গলা টিপে ধরে বলে যে এই কথা বলবে না? কেউ তো তা করে না। আর সংবাদপত্র তো লিখেই যাচ্ছে।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করলে সবারই তার প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনও একজন সাধারণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ যদি অসত্য তথ্য দেয় আর এর বিরুদ্ধে সে যদি সম্মানহানির মামলা করে তার জন্য দোষ কিভাবে দেবে? কেউ যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে মিথ্যা অসত্য তথ্য দেয়—যদি কারো চরিত্র হনন করে তবে নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিরও অধিকার আছে যে এখান থেকে কিভাবে সে প্রকেটশন পাবে। নিজের ওপর যে মিথ্যা দোষারোপ হয়েছে সেখান থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার সকলেরই রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে। এই লোকগুলি মনে করে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। হয় পতাকা পেতে পারে, বা তারা কিছু হতে পারে বা তাদের একটু তোষামোদি খোষামুদি হয়। গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের সুযোগটা কম থাকে। তাদের সাধ আছে ক্ষমতায় আসার কিন্তু জনগণের কাছে ভোটে যাওয়ার সাধ্য নেই। অনেকে দল গঠনের চেষ্টাও করেছে কিন্তু মানুষের সাড়া পায়নি। জনগণ সাড়া না দিলে তার দোষ কার? এরাই নানা কথা বলে বেড়ান।

তিনি বলেন, এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বদনাম করা হচ্ছে। কিন্তু, অন্যের কাছে দেশের বদনাম করে তারা কতটুকু কী অর্জন করতে পারবে তা জানি না। তারা মনে করছে, বদনাম করতে পারলেই উনাদের নাগরদোলায় করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেই আশায় তারা থাকে। তবে সেই আশার গুড়ে বালি। সেটা আর বাংলাদেশে হবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্পূর্ণভাবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা আছে, বাক স্বাধীনতা আছে, ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। তবে স্বাধীনতা ভোগ করতে গেলে দায়িত্বও পালন করতে হয়। একজনের যেটা অধিকার অন্যের জন্য তা দায়িত্ব। কারও অধিকার ক্ষুণ্ন করা কিন্তু স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা যদি কেউ ভোগ করতে চায় তাহলে দায়িত্ববোধ নিয়েই ভোগ করতে হবে। এটা হলো বাস্তবতা।

বর্তমান সংসদ কার্যক্রমের প্রশংসা করে সংসদ নেতা বলেন, এই সংসদে এখন কোনও খিস্তি খেউড় নেই। অশ্লীল কথাবার্তা নেই, চিৎকার চেঁচামেচি নেই। অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশের মধ্য দিয়ে সংসদ চলছে। বিরোধী দল কিন্তু সরকারকে ছেড়ে দিয়ে কথা বলছে না। তারা সমালোচনা করেই যাচ্ছে। ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদ এইভাবে চলছে। বিএনপি বিরোধী দলে থাকতে যে নোংরামি, বাজে কথা, নানারকম শারিরীক করসৎ চলতো সেগুলো এখন আর নেই।

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আজকে অনেক বিএনপি নেতা বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) সভার অনুমতি মুক্তাঙ্গনে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু, তারা সেখানে না গিয়ে অফিসের সামনে সভা করেছে। যারা এটা বলছে তারা না জেনে অর্বাচীনের মতো বলছে, না হয় ইচ্ছা করে অসত্য কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তাদের একটা ষড়যন্ত্র ছিল বলেই তারা প্রথমে মুক্তাঙ্গনে সভার অনুমতি দেয়নি। পরে মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে এই অনুমতি দিয়েছিল। তারপর এই গ্রেনেড হামলা ঘটে এবং উদ্দেশ্য ছিল, হামলার পর সব আলামত নষ্ট করে ফেলা।(বাংলা ট্রিবিউন)