সিডনিতে বিজয় উৎসব শুরু

সিডনিতে বিজয় উৎসব শুরু

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে গত ৯ ডিসেম্বর (রবিবার ) ‘এসো মেতে উঠি বিজয়ের আনন্দে’ স্লোগান নিয়ে ‘সিডনি বাঙালী কমিউনিটি’র (ইনক) আয়োজন করেছে বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্তি উৎসবের । দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় পতাকা সগৌরবে ঊর্ধ্বাকাশে নিজের অস্তিত্বকে জানান দিয়েছে। একাত্তর না দেখলেও তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বুকে ধারণ করে। তারই একটি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছিল গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা বাঙালী ছেলে মেয়েদের বিজয় উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের এমপি অনুলাক চান্টিভংগ। তিনি সিডনি বাঙালি কমিউনিটি ইনকের শিশু কিশোরদের বর্ণিল আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মাল্টিকালটারাল অস্ট্রেলিয়া চর্চায় অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটির নতুন প্রজন্মকে তাদের মাতৃভাষা চর্চা ধরে রাখার জন্য অভিনন্দন জানান। এছাড়াও উপস্থিত সকলকে ১৯৭১ বাংলাদেশের সালে অর্জিত বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান।

শিশু কিশোরদের বিজয় উৎসবকে উৎসাহ দিতে অনুষ্ঠানের শুরুতেই  সিডনির অতি পরিচিত গানের শিল্পী জুটি আতিক হেলাল এবং আরেফিনা মিতা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন।সাথে ছিল ছোট বন্ধু সাফিনা।

অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সংগঠন কিশোর সংঘ। বিজয় দিবসকে বরণ করতে তাদের পরিবেশনায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্ববোধক গান,নাচ ও আবৃত্তি। মেধাবী কিশোর-কিশোরীদেরকে নিয়ে এই দলটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন সীমা আহমেদ এবং নৃত্যে সহায়তা করেন অর্পিতা সোম চৌধুরী। তারা একক গান, আবৃত্তি, নৃত্য ছাড়াও পরিবেশন করে দলগতভাবে গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান। লাল-সবুজের দেশীয় সজ্জায় তাদের পরিবেশনা সবার মন ছু.য়ে যায়।এই দলে একক ও দলীয় গানে ছিল ছিল মোলতাজাম হাবীব, আনুভা আহমাদ , রিডা হক, মুনতাহার হক, মাহিমা বিশ্বাস, ফাহমিদা পাঠান, তাবীয়া জাহীন , রায়া খান, আরিবা জাহীন। কবিতায় ছিল ঐহিক তারিক, পৃথিবী তাজওয়ার, জাফরী আহমাদ এবং নৃত্যে ছিল নুসাবা রহমান , মেঘা দত্ত এবং সাফাইয়া ।কিশোরসংঘের উপস্থাপনায় ছিল আনুভা আহমাদ।

স্বাধীন বাংলা বেতারের গানগুলো নিয়ে আকর্ষণীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যকলা ডান্স স্কুল। শাহীন আক্তার স্বর্ণার দক্ষতায় তৈরী এই সুশৃঙ্খল দলটি আসে বিভিন্ন বয়সী শিশু-কিশোরী নিয়ে। যেমন ছিল তাদের সাজ-সজ্জা, তেমন ছিল তাদের নাচের পরিবেশনা। এক কথায় তাদের এই পর্বটি ছিল আবেগময়,নয়নজোড়ানো।এই দলটিতে নৃত্য করে সারিয়া ,সাদিয়া ,টাভিশা ও ইরীশা।

এর পর আসে কিশালয় কচিকাঁচা সঙ্গীত, ছড়া, নাচ ও গানসহ বিজয় দিবস ভিত্তিক বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থাপন করে। রোকসানা বেগমের সার্বিক পরিচালনায় গড়ে উঠা কিশালয় কচিকাঁচা সিডনিতে অতি পরিচিত একটি শিশু-কিশোর সংগঠন। ওদের বাহারি রঙ ও মন মাতানো পরিবেশনা অস্ট্রেলিয়া তে বেড়ে উঠা প্রজন্মের কাছে একটি উদ্দীপনা। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিদেশের মাটিতে ধরে রাখার জন্য শত প্রতিকূলতার মধ্যে এই দলটি সিডনি জুড়ে তাদের দলীয় সঙ্গীত, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশনা অব্যাহত রেখেছে গত এক দশক ধরে। এই দলটির গান, নাচ ও ছড়ায় অংশ নেয় রিহা , রিনিতা, রানিয়া, অনন্যা, পন্থিয়া, কৃশ,এনাফ,রিধি,আর্শিতা, আনান, দিব্বো,জয়া, ছোয়া,নাশমিয়া, নুয়ায়ীরা, সাফিনা, আনিলা, আদ্রিতা।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী দিলরুবা খানের ছেলে গিটারিস্ট সোহেল খানের পরিচালনায় সিডনিতে নতুন করে গড়ে উঠা ক্ষুদে গিটারিস্ট দল সদ্য প্রয়াত সংগীত শিল্পী আইযুব বাচ্চুর স্বরণে এক মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশন করে উপস্থিত সকলকে তাকে লাগিয়ে দেয়। এই দলে ছিল সামিন শাখাওয়াত অথৈ, সাদাত শাখাওয়াত দিপ্র, ইশান তারিক, রনিন রোইছ,আদ্রিতা রহমান,সাফিনা জামান ও মালিহা তাসনীম।

এছাড়াও আবৃত্তি করেন নাট্যকার ও অব্ত্তিকার শাহীন শাহনেওয়াজ। অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা গামা আব্দুল কাদের, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল হক, বুদ্ধিজীবী ড: কাইয়ুম পারভেজ , নির্মল পাল এবং জন্মভূমি টিভির মহাপরিচালক আবু রেজা আরেফিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ,বাংলাদেশী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ও পেপার পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে তবলায় ছিলেন সাকিনা আক্তার, মিহির পারভেজ ,গীটারে সোহেল খান , মন্দিরায় লোকমান হাকিম  এবং  শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আত্বাবুর রহমান । আপ্যায়নে ছিলেন খশবু রেটুরেন্ট।
সিডনি বাঙালী কমিউনিটি ইনকের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সেলিমা বেগম।পোশাক এবং সাজসজ্জায় সহায়তা করেন বিলকিস খানম পাঁপড়ি। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন সাকিনা আক্তার ও পূরবী পারমিতা বোস । অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন অজয় দত্ত ।