মানুষ যেন ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসে নতুন বছরে

মানুষ যেন ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসে নতুন বছরে

ফজলুল বারী:নতুন বছরের আশা বাংলাদেশের মানুষ ভোটে ফিরুক। নানা কারনে দেশের মানুষজন ভোট থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটারবিহীন খা খা করে। এটি দেশের ভবিষ্যত-গণতন্ত্রের জন্যে ক্ষতিকর। আরেকটা প্রত্যাশা। আমি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা-চাকরিতে সহায়তা করতে ভালোবাসি। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ এখনও ভুলপথে হাঁটছে। যা খুশি পড়াশুনার ধারনাটা এখন ভুল। যে পড়াশুনা করলে কাজের বাজার আছে দুনিয়ায় সেটাই সবাই পড়ে। সবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রায় একটা রিপোর্ট হয়, অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেনা। যোগাযোগ করলে দেখা গেলো সে ইসলামের ইতিহাস অথবা ইংরেজি সাহিত্য এমন কোন একটি বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে! এমন বিষয়ে পড়াশুনা করে কাজের বাজার কোথায়? এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা দরকার।

বাংলাদেশের মানুষজন যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে এরজন্যে শুধু সরকারি দলের কার্যক্রম নয় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের উপরই মানুষ হয় আগ্রহ হারিয়েছেন অথবা বীতশ্রদ্ধ। মানুষের সামনে ভালো কোন বিকল্পও নেই। বাংলাদেশে সাধারন ধারনায় আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে কি করে বা করতে পারে এ নিয়েও তাদের ধারনা আছে। এরজন্যে দেশের গোটা রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়েই তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা-অনাস্থা কাজ করে। নানা কারনে তারা ভোটের দিনটিকে নিরাপদও মনে করেননা। সে কারনে তারা নিজেদের কাজকর্ম ফেলে ভোটকেন্দ্রে যাবার আগ্রহ হারিয়েছেন। দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে ফেরাতে হবে। নতুবা দেশের গণতন্ত্রের বিপদ ঘটে যেতে পারে।

ভোট দেয়া বা রাজনীতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মানুষজনেরও আগ্রহ অনেক কম। সে কারনে জরিমানার ভয় দেখিয়ে অগ্রিম ভোট নেবার মাধ্যমে তাদের ভোটে আগ্রহী করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিংহভাগ মানুষ যার যার কাজ-জীবন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। বাংলাদেশের মতো প্রকাশ্য স্থানে রাজনৈতিক জনসভা-মিছিল এদেশে হয়না। নির্বাচনী জনসভা-মিছিলও নয়। প্রার্থীরা সকালে রেল স্টেশনে লিফলেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। গুড মর্নিং, হাও আর ইউ বলে ধরিয়ে দেন একটা লিফলেট।  নির্বাচনী প্রচারে লোক নিয়োগের সামর্থ্য প্রার্থীদের নেই। বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটের প্রচারের রেওয়াজ এদেশে নেই। শপিংমল, বার-ক্লাব যেখানে বিস্তর লোকজন থাকে সে সবে ঘুরে ঘুরে ব্যক্তি পর্যায়ে প্রচার চালান।

প্রধান নেতারা মূলত প্রচার চালান মিডিয়ার মাধ্যমে । নির্বাচনী তফশিল ঘোষনার পর ভোটারদের কাছে পোষ্টাল ব্যালট পাঠানো হয়। যাতে তারা আগেভাগে ভোট দিয়ে রাখতে পারেন। ভোট হয় এখানে ছুটির দিন শনিবার দেখে। এরপরও শনিবার যাদের কাজ থাকে তারা যাতে আগেভাগে ভোট দিয়ে রাখতে পারেন সেজন্যে এলাকায় এলাকায় খোলা হয় আর্লি ভোট সেন্টার। এভাবে চেষ্টা করা হয় যাতে সবার ভোটটি নেয়া যায়। যৌক্তিক কারন ছাড়া কেউ যদি ভোটে অনুপস্থিত থাকেন তাদের ঠিকানায় জরিমানার চিঠি যায়।

বাংলাদেশে এখনই জরিমানার ব্যবস্থা করা যাবেনা। এক সময় প্রার্থীদের উদ্যোগে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্যে যানবাহনের ব্যবস্থা করা হতো। এখন বিষয়টি নির্বাচনী আচরনবিধির কারনে বন্ধ হয়েছে। এরপরও  ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে আগ্রহী করতে প্রার্থীরা ব্যক্তি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারেন। এরজন্যে ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের আস্থা অর্জন গুরুত্বপূর্ন। হুন্ডাগুন্ডা দিয়ে ভোটারদের আস্থা অর্জন করা যায়না। সরকারিদলের নানান বাড়াবাড়িও ভোটারদের ভোট দিতে যেতে নিরুৎসাহ যোগায়। বিএনপি এমন অভিযোগ এখন প্রায় করে। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি যা করেছিল।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকার হিন্দু ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারতেননা। সাকা চৌধুরী তাদের উদ্দেশে বলতেন, কষ্ট করে তাদের ভোট দিতে যেতে হবেনা। তিনি তাদের ভোট পেয়ে গেছেন! বিএনপি এখন ভোট শুরু থেকে ভোট নিয়ে এমন সব নেতিবাচক প্রচারনা চালায় যে তাদের ভোটাররাও ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ পায়না। সবাইকে মিলে চিন্তা করতে হবে কিভাবে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে ফেরানো যায়। এতে দেরি ঘটলে গণতন্ত্রের বিপদ হয়ে যেতে পারে। মানুষ যদি ভোট দিতে যায় তাহলে তাদের ভোট নিয়ে কেউ কারচুপি করার সাহস পাবেনা।

বাংলাদেশের পড়াশুনার সালতামামি নিয়ে ভাবতে হবে সকল পক্ষকে। পৃথিবীতে প্রাথমিক চিকিৎসা অধিকার। উচ্চ শিক্ষা পরিচালিত হয় বানিজ্যিক ভিত্তিতে। স্কুলে যে এখন বাচ্চাদের ফ্রি বই দেয়া হয় এরজন্যে সরকারকে ধন্যবাদ। এটা কিন্তু সরকারের দয়া বা কৃতিত্ব নয়, এটি সরকারের দায়িত্ব। এবার বই উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলার ফাঁকে পড়াশুনার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলেছেন। এভাবেই উন্নত বিশ্বে পড়ানো হয়। এত বইয়ের বোঝা কোথাও নেই। নতুন বছরের শুরুতে বলা হয় অতগুলো খাতা-কলম কিনতে হবে। স্কুলে পড়ার বিষয়গুলোর ফটোকপি দেয়া হয়। প্রজেক্টরের মাধ্যমেও পড়ানো হয় শ্রেনীকক্ষে।

বাংলাদেশে মিডিয়ায় মাঝে মাঝে নিউজ হয় অমুক রিকশা চালিয়ে পড়েছে বা দোকানে কাজ করে পড়েছে, সাহায্য চাই। অথচ উন্নত বিশ্বেও সবাইতো কাজ করেই পড়ে। উন্নত বিশ্বের আব্বু-আম্মুরাতো বাংলাদেশের আব্বু-আম্মুর চেয়ে গরিবনা। কিন্তু উন্নত বিশ্বের আব্বু-আম্মুরাতো ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ দেবার কথা ভাবতে পারেননা, ছেলেমেয়েরাও তা ভাবেনা। সবাই কাজ করে পড়ে। বাংলাদেশে এ চিন্তার প্রচার বাড়াতে হবে। এখনও বাংলাদেশের অনেক পরিবারের কর্তা একা কাজ করে তিন-চারজন ছেলেমেয়ের পড়ারশুনার খরচ দেন। অনেকের সে সামর্থ্য থাকেনা। অনেকে এরজন্যে দুর্নীতি করেন। ছেলেমেয়েদের কাজ করে পড়াশুনার উপযোগী করে তুললে পিতাকে দুর্নীতি করতে হবেনা। তাতে দেশ বাঁচবে।

পড়াশুনায় বাচ্চাকে বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দিন। যে যে বিষয়ে আগ্রহী তাকে সে বিষয়ে পড়তে দিন। তাহলে সে তাতে ভালো করবে। পড়াশুনার সঙ্গে যাতে কাজের বাজারের সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বিবিএ-এমবিএ পড়েন! এর আর কোন কাজের বাজার নেই। অস্ট্রেলিয়ায় যত ছাত্র পড়তে যান তাদের বেশিরভাগ হিসাববিজ্ঞানে পড়তে যান। এর আর কোন কাজের ব্যবস্থা নেই অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ায় নতুন যারা পড়তে যাবেন গুগলে সার্চ দিয়ে স্কিল অকুপেশন লিস্ট অব অস্ট্রেলিয়া এর তালিকাটি আগে দেখে নেবেন। যে দেশে যে পড়তে যাবেন সে দেশের কোন সেক্টরে লোকজন লাগবে সেটি আগে দেখবেন। নইলে সেমিস্টার প্রতি দশ-পনের লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশে যাবার দরকার নেই। দেশে অনেক কম টাকায় পড়া যায়।

দেশে পড়ে কেউ যদি গ্রামে একটি খামারও গড়ে তুলে সে সাফল্য পাবেই। রাস্তার পাশে যে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে তাদেরও এক সৎ আয়ের জীবন আছে।  শুধু চাকরিই যাতে কারও এইম ইন লাইফ না হয়। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা সহায়তা করতে চাই। আমাদের লিখুন প্রিয় প্রজন্ম।

ফজলুল বারী
fazlulbari2014@gmail.com