ফজলুল বারী:আবার একটি মেয়ের শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সমাজের সঙ্গে মিশে থাকা এক শ্বাপদ শয়তান। মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হওয়াতে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর একটি ইতিবাচক খবর, ছাত্রলীগও এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। আজকাল নানা অপবাদ মাথায় বয়ে বেড়ানো সরকারি ছাত্র সংগঠনটি অনেকদিন পর সাধারন ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, এটা আনন্দের। তবে আমি একটা বিষয় নিয়ে ভয়ে ছিলাম। তাহলো ভাগ্যহীন মেয়েটা গোপনীয়তা থাকবে কিনা সন্দেহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে মানবাধিকার কর্মী, পুলিশ সবাই দলবেঁধে হাসপাতালে মেয়েটির কাছে যাচ্ছেন। মেয়েটির মা-বাবা-মামা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের চিনে মিডিয়া। ভয়ে ভয়ে লিখছিলাম, কখন না কেন এক্সক্লুসিভ বা ব্রেকিং নিউজ শিরোনামে সব ছেপে দেন! সেই ভয়টাই সত্যি হলো! দেশের এক টেলিভিশন এরমাঝে কান্ডজ্ঞানহীনের মতো প্রচার করে দিয়েছে ভাগ্যহীন মেয়েটির পুরো বায়োডাটা! এমন অবস্থায় অনেক সময় সমাজচ্যুত মেয়েটির আত্মহত্যার বিকল্প থাকেনা।
ধর্ষন বাংলাদেশের এক সামাজিক রোগের নাম। দেশের লোকজনের পোশাক পরিচ্ছদ যত ধর্মীয় হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্ষন, মিথ্যা কথা বলা, দুর্নীতি সবকিছু বেড়েছে। বাংলাদেশের অনেক অভিভাবক মাঝে মাঝে আমাকে ফোন করে বলেন, তার মেয়েটাকে পড়াশুনা করতে সিডনি পাঠাতে চান। মেয়েদের জন্যে কতোটা নিরাপদ সিডনি। আমি সবাইকে একটা কথা বলি তাহলো, আপনার মেয়ে বাংলাদেশে যতোটা না নিরাপদ, এর চাইতে সিডনিতে অনেক বেশি নিরাপদ থাকবে। কারন এখানে ধার্মিক কম থাকলেও ভন্ড কম। রাতের বেলাও মেয়েরা এখানে বাসে-ট্রেনে কাজ শেষে স্টেশনে ফিরে একাকী হেঁটে বাসায় ফেরে। কিছু ঘটতে পারে এমন তারা এখানে ভাবতে শেখে না।
বাংলাদেশে ধর্ষন বাড়ার অনেক কারনের মধ্যে একটি কারন ওই ভন্ডের দল যারা সওয়াবের জন্যে ঢাকা-নারায়নগঞ্জের সব পতিতালয় তুলে দিয়েছিল। এরমাধ্যমে ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরের অনেক আবাসিক হোটেলকে এরা পতিতালয় বানিয়ে ফেলা হয়। বহুগামী ধর্ষক রোগীরা আগে পতিতালয়ে যেতো। এখন যাকে যেখানে সুবিধামতো পায় তাকেই ঝাপটে ধরে। বাংলাদেশের সমাজে কিলবিল ঘুরে বেড়ায় এমন অনেক ধর্ষক পুরুষ। টানবাজার পতিতালয় যখন ভেঙ্গে দেয়া হলো, বিপন্ন দেহজীবীদের ইন্টারভ্যু করতে গিয়ে অবাক যে স্টোরিটি পাই তাহলো দীই মেয়েদের পতিতাপল্লীতে যাবার পিছনে দায়ী কোন কোন পুরুষ। বিয়ে করার কথা বলে ভোগ করে পালিয়েছে। এরপর সমাজদরদী সেজে তারাই সওয়াবের আশায় পতিতাপল্লী ভেঙ্গে দিয়ে সেই জমিই দখল করেছে। এরাই আজ ধর্ষকদের ছড়িয়ে দিয়েছে সবখানে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেয়েটি হলে থাকেন। বান্ধবীর সঙ্গে পরীক্ষার পড়া পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শেওড়াপাড়া যাচ্ছিল। ভুল করে কুর্মিটোলা নেমেই সে ধর্ষকের পাল্লায় পড়েন। এরপর সেখান থেকে উদ্ধারের পর তিনি আলোচনায় আসেন। যেহেতু ভিকটিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে সে কারনে রবিবার রাত থেকেই তাকে নিয়ে ফেসবুকের নিউজফিড সয়লাব হয়। ছাত্রলীগ এই প্রতিবাদে শরীক হবার পর বিষয়টি ভিন্ন ব্যঞ্জনা পায়। সোমবার আমরা দেখতে পাই এই অপরাধ শনাক্তে জড়িয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ। সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল অকুস্থল থেকে নানান আলামত উদ্ধার করেছে। এরমাঝে জানা গেছে ধর্ষক ছিল একজন। ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে মেয়েটির বই, ঘড়ি, চাবির রিং, ইনহেলার। এগুলোয় ধর্ষকের আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যাবার কথা। এত মানুষের বিক্ষোভ সামাল দিতে এই ধর্ষকের দ্রুত ধরা পড়া দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বলেছেন ভিকটিম মেয়েটির যা যেখানে দরকার তা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কথা যেন ঠিক থাকে মাননীয় উপাচার্য। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হওয়াতে এমন সবাই হাত বাড়িয়েছেন। সবাইকে কৃতজ্ঞতা। ছাত্রলীগ এই আন্দোলনে আসায় নতুন বছরে নতুন একটি যাত্রা শুরু হলো। ৪ জানুয়ারি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দু’পাশে দাঁড়ানো সংগঠনটির নতুন দুই নেতা জয়-লেখককে অন্য রকম লাগছিল। এখন যুবকদের বেশিরভাগের মুখ অন্ধকার করা দাঁড়ি! কিন্তু জয়-লেখক দু;জনেই ছিলেন ক্লিনসেভড। মায়া লাগছিল। এমন ছাত্রদের ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনে তাদের থাকতে হবে। আমি দেশে থাকলে ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের নানা কাজে লাগাতাম। ফসল কাটায় তাদের কাজে লাগালে কৃষকেরও উপকার হতো, তাদের হাতেও কিছু পয়সা আসতো। এভাবে ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েদের মানুষের কাজে লাগলে তারা এবং দেশ বদলে যাবে। দেশের চলতি চাঁদাবাজির রাজনীতি পাল্টে দিতে ছাত্র-যুবকদের আয় ভিত্তিক কাজে লাগানো দরকার।