ফজলুল বারী: বন্দুকধারীর গুলিতে শুক্রবার মারা গেছেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাপানে দু’দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জনপ্রিয় প্রভাবশালী এই রাজনীতিক। জাপানে এ ধরনের ঘটনার নজির নেই। আকস্মিক এই ঘটনায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ হতবাক, ক্ষুদ্ধ ও শোকার্ত।
শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হবার পর থেকে নিউজগুলো অনুসরন করছিলাম আর ভাবছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার কথা। বরাবর বন্দুকের টার্গেটে আছেন জাতির পিতার এই জৈষ্ঠ কন্যা। শিনজো আবে হঠাৎ করে এমন আক্রমন আর হত্যাকান্ডের শিকার হবেন তা কেউ না ভাবলেও শেখ হাসিনা বরাবর ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছেন।
সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কতবার যে তিনি দৈবাৎ বেঁচে গেছেন! সর্বশেষ বিএনপি তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সেই হত্যাচেষ্টার মূল কুশীলব ছিলেন তারেক রহমান। একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির বর্তমান নেতা এখন বিলাতে দেশান্তরী।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে তার দেশে ফেরার কোন সুযোগ নেই। তার দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে বিএনপির এখন শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। সামরিক শাসনের ঔরসে জন্ম নেয়া হত্যায় বিশ্বাসী দলটির সদরে অন্দরে কান পাতলেই একুশ আগষ্ট টার্গেট মিস হয়ে যাওয়া নিয়ে তাদের আক্ষেপ শোনা যায়।
এদের আয়োজনে দেশে–বিদেশে কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে সব খবর জমা হচ্ছে সরকারের কাছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তব্যে হঠাৎ করে নিজের জীবনশংকার কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গার্ড রেজিমেন্টের যারা তাঁর নিরাপত্তা বিধানের সঙ্গে জড়িত তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকার কথাও বলেছেন। শেখ হাসিনা সাধারনত এভাবে কথা বলেননা। তাঁর কাছে এসব নিয়ে বিশেষ কী তথ্য আছে এর বিস্তারিত জানার সুযোগ কম। আওয়ামী লীগের লোভী নেতাকর্মীরা মাঝে এসব নিয়ে ভাবেন কী?
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে আইজিপি বেনজির আহমেদ বলেছিলেন তারা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার নানা পরিকল্পনার পুনঃমূল্যায়ন করেছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এমন কোন ঘটনার সৃষ্টি করা হতে পারে যাতে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা না যায়।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঠেকাতে না পারায় মরিয়া ভূমিকার খবর আছে সরকারের কাছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে দেশে ধর্মীয় ইস্যু সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত শিবির। এটাই তাদের মুখস্ত নকশা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে বেছে বেছে হিন্দু শিক্ষকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ধর্মীয় অবমাননার গুজব।
ভারতে হিন্দু মৌলবাদীরা ক্ষমতায় থাকায় বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদীরা। বিজেপির নেত্রী নুপুর শর্মার ঘটনার প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে। মধ্যপ্রাচ্যে বিষয়টি থেমে গেলেও সুযোগ সন্ধানীরা তা বাংলাদেশে থামতে দিচ্ছেনা!
নুপুর শর্মাকে সমর্থন করে নড়াইলে এক হিন্দু ছাত্রের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ইস্যু করে নড়াইলের জেলা প্রশাসক–পুলিশ অফিসারের উপস্থিতিতে একজন হিন্দু শিক্ষকের গলায় জুতোর মালা পরিয়ে যেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মেরে বলা হয়, পারলে কিছু কর! জেলা প্রশাসক–পুলিশ সুপারের ব্যর্থতা আড়াল করতে এখন অমুক অমুককে প্রত্যাহার করা হচ্ছে!
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে কারা কিছু ঘটানোর ফন্দি আঁটছিল সেই তালিকা গোয়েন্দাদের হাতে। কিছু সাংবাদিকের নামও আছে এই তালিকায়! অদ্ভূত এক দেশ বাংলাদেশ! দেশবাসীর স্বপ্নের সেতু উদ্বোধন নিয়ে প্রানোচ্ছ্বল পরিস্থিতি যেন কিছু লোকের মনে বড় জ্বালার সৃষ্টি করে!
সেতু উদ্বোধনের আগের দিন হঠাৎ করে পাঠ্য পুস্তক থেকে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেবার অসত্য কল্পিত বক্তব্য বিবৃতি আকারে প্রচার করা হয়! যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ফাঁসি দেয়ার এরা প্রতিশোধ নিতে চায়। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি এসব বক্তব্যের জবাব দিতে দিতে পেরেশান হচ্ছিলেন।
সংসদে এ নিয়ে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা করেন জাপা’র এক এমপি! সামরিক শাসনের ঔরসে জন্ম নেয়া এই দলটিরও ধর্ম কার্ড খেলা নতুন নয়। রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম এরাই সংযোজন করেছিল। চাপের মুখে ওই এমপি বক্তব্য প্রত্যাহার করলেও তা মৌলবাদীদের হাতে চলে গেছে।
পুলিশের একটি রহস্যজনক ভূমিকাও অনেকে খেয়াল করছেন! দেশের কোথাও জামায়াত শিবিরের গোপন বৈঠক যেখানে অতিদ্রুত নস্যাৎ করা হয় সেখানে ইদানীং দলটি বিনা বাধায় মিছিল করছে ঢাকায়। মূহুর্তে সে মিছিলের ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশেষ একটি অনলাইন!
বেগম জিয়াও সুবোধ আচরন করছেন! দুর্নীতির মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বিবেচনায় কারাগারের বদলে গুলশানের বাসায় থাকছেন। তিনি কী করছেন সে খবরও চলে আসছে! প্রতিহিংসাপরায়ন এই মহিলার সুবোধ আচরন তার স্বভাব বিরোধী।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, আমান উল্লাহ আমান সহ নানা নেতা হঠাৎ করে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে মারমুখো বক্তব্য দিচ্ছেন। মির্জা ফখরুল সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, শেখ হাসিনার পরে আপনাদের নেতৃত্ব কে দেবেন তা নিয়ে ভাবুন!
মাহমুদুর রহমান মান্না, রেজা কিবরিয়া, নুরু সবার বক্তব্য ক্রমশ আক্রমনাত্মক! জাফরউল্লাহ চৌধুরী সহ এরা সবাই মিলে হঠাৎ করে ‘নিরীহ আলেম’ নাম দিয়ে তাদের মুক্তি দাবি করছেন, যারা নরেন্দ্র মোদী ইস্যুতে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার রেল স্টেশন সহ নানা স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া সহ দেশে অরাজকতা সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন!
মামুনুল কিভাবে গ্রেফতার হয়েছিলেন তা সবাই ভুলে যাবার কথা নয়। তাকেও ‘নিরীহ আলেম’ আখ্যা দিয়ে তার মুক্তি দাবি করা হচ্ছে! এদের সবার টার্গেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন! কারন শেখ হাসিনার প্যারালাল কোন নেতা দেশে নেই। এরা জেনে গেছে শেখ হাসিনাকে না মারলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবেনা।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যের ভাষা ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তার ঢাকা মিশন দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। সর্বশেষ তিনি ওয়াশিংটন ঘুরে এসেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের আয়োজনেও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ভূমিকা ছিল। মার্কিন নানা নথিতে এর প্রমান মিলেছে।
পিটার হাসদের মিশন বৃত্তান্ত শেখ হাসিনা জানেন। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া দিতেও তিনি কসুর করেননি। এমন সাহস ড্যাম কেয়ার শেখ হাসিনাই রাখেন। অনেকের ধারনা মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে তিনি উত্তরসূরী হিসাবে তৈরি করছেন।
আওয়ামী লীগ সহ এর নানান অঙ্গ সংগঠনের লোভী নেতা–কর্মীরা কী নেত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে আদৌ ভাবছেন? না তাদের সে সময় আছে? শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করা এখন সময়ের দাবি। হঠাৎ করে কী ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন উদাসীন ভূমিকা নিয়েছে? সৃষ্টিকর্তাই তাঁকে রক্ষা করবেন।